মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
মকবুলের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

ফের অস্বস্তিতে জামায়াত

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জামায়াতে ইসলামীতে ‘ক্লিন ইমেজ’ হিসেবে পরিচিত নতুন আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠায় দলটিতে ফের অস্বস্তি বিরাজ করছে। গত ছয় বছর ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালনের পর ১৭ অক্টোবর দলের পূর্ণাঙ্গ আমির হিসেবে শপথ নেন মকবুল। নতুন আমির পদ পেয়ে শপথ গ্রহণের পরপরই অভিযোগ ওঠে, মকবুল আহমাদ ১৯৭১ সালে ফেনী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী  অপরাধে যুক্ত ছিলেন। ওই সংবাদের সূত্র ধরেই জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদের যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর এ ইস্যুতে চরম বেকায়দায় পড়েছে জামায়াত। চেইন অব কমান্ড ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে দলটি। এদিকে মকবুল আহমাদের যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধানের উদ্যোগে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ছয় বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত আমির থাকাকালে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। এখন শপথ নেওয়ার পরপরই এ অভিযোগ! দলের বিরুদ্ধে সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ অনুসন্ধান।’ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, দুটি অনলাইন পত্রিকার খবরে মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে দুটি সুনির্দিষ্ট অপরাধের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তার সত্যতা তারা অনুসন্ধান করবেন। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে এলে এবং যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তখন মামলা করে তদন্ত করা হবে। জানা যায়, ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পরই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। বিচার ঠেকাতে হরতালে সহিংসতার মামলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সব নেতা হয় কারাগারে, নয় তো আত্মগোপনে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নেই রাজনৈতিক প্রকাশ্য কর্মসূচি। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সাত বছর সম্মেলন করতে পারেনি জামায়াত। এ অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের কলঙ্ক মুছে ফেলতে চাইছে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াত বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইতিমধ্যে দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা ও কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। একই অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড নিয়ে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন দলের সাবেক আমির গোলাম আযম। দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও আমৃত্যু কারাভোগ করছেন। এ ইস্যু থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পথ খুঁজছিল জামায়াত। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই, এমন একজনকে আমির পদে চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। রুকনদের ভোটের মাধ্যমে দলের আমির নির্বাচনের কথা বলা হলেও মূলত দলের নীতিনির্ধারকরা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই ধরে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদকেই বেছে নেন। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ‘মকবুল আহমাদ শপথ নেওয়ার পরপরই শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় আমাদের টেনশন রয়েই গেল। আমরা অস্বস্তিতেই থেকে গেলাম।’ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন মকবুল আহমাদ। জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘মকবুল আহমাদের ১৯৭১ সালে রাজাকার কমান্ডার হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সে সময় তিনি একটি খ্যাতিমান হাইস্কুলের সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭১-এর হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত পানি অনেক দূর গড়ালেও আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে কোথাও কেউ সামান্য অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেনি। কাজেই নির্বাচিত আমির হওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ প্রকাশ করা হয়েছে তা একান্তই আদর্শিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাড়িত এবং নেহাত প্রতিহিংসামূলক।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর