মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিরপেক্ষ নির্বাচনেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব

শফিউল আলম দোলন

নিরপেক্ষ নির্বাচনেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব

জয়নুল আবদিন ফারুক

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, গণতন্ত্রবিহীন উন্নয়ন কখনই টেকসই হয় না। কোনো দেশে যদি আকাশচুম্বী উন্নয়নও ঘটে, আর সে দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে, মানুষের মৌলিক অধিকার না থাকে তাহলে সে উন্নয়ন কখনই টেকসই হয় না। আধিপত্যবাদের কড়াল গ্রাসে অনেক সময় সে দেশের অস্তিত্ব পর্যন্তও বিলীন হয়েছে যায়। ইরাক, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের দিকে তাকালেই অনুমান করা যায়। কিন্তু আমাদের প্রিয়  মাতৃভূমিকে সেদিকে ঠেলে দিতে পারি না। এ জন্য দল-মত নির্বিশেষে আমাদের সবার মূল টার্গেট হওয়া উচিত দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। আর নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই কেবল তা সম্ভব। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলাপকালে উপরোক্ত মন্তব্য করেন জাতীয় সংসদে নোয়াখালীর সেনবাগ এলাকা থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সাবেক এই এমপি। আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা আশা করি আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে যে নেতৃত্ব এসেছে তা গণতন্ত্র বিকাশে ভূমিকা রাখবে। তাদের হাত দিয়ে দেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরে পাবে বাংলাদেশের মানুষ। বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, দেশের বর্তমান দুঃসহ পরিস্থিতি উত্তরণে নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু ভোটবিহীন নির্বাচনের এই সরকার স্ব-ইচ্ছায় নির্বাচন দেবে বলে মনে হয় না। কারণ তারা ভালো করেই জানে, নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় নির্বাচন দিলে- আর মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে তাদের দল আওয়ামী লীগ আর কখনই সরকারে আসতে পারবে না। এ জন্য নির্বাচন না দিয়ে গুম, খুন, মামলা-হামলা, নির্যাতন-নিপীড়নসহ বিরোধী মতাবলম্বীদের কঠোর দমননীতির মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা ধরে আছে সরকার। ক্ষমতাকে এক প্রকার চিরস্থায়ী করে ফেলেছে বলেই ধরে নিয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ। কিন্তু না, সবকিছুরই শেষ আছে। জনগণ যেদিন নেমে আসবে সেদিন তাদের এই দুঃস্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন ‘দেশনেত্রী’ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। জয়নুল আবদিন ফারুক নিজের দলের সাংগঠনিক বিষয়সহ দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন নিঃসংকোচে। বিশেষ করে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থাসহ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার সংকটের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়াও উগ্র-সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশে এখন সর্বস্তরে এমন একটা গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে, মানুষ কিছু বলতেও পারছে না, আবার সইতেও পারছে না। আইনের শাসন বলতে আর অবশিষ্ট কিছু আছে বলে মনে হয় না। পত্রিকায় দেখলাম- শুধু পুলিশের সন্দেহের কারণে বিক্রমপুরের বাবুল নামের একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে। এখন তিনি বাড়ির রাস্তাঘাট পর্যন্তও ভুলে গেছেন। অথচ এই আওয়ামী লীগ সরকারের ৮ বছরের শাসনামলে খুনের মামলার কয়েক ডজন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর শহরে কয়েকটা টাকার লোভ সামলাতে না পেরে পুলিশ প্রশাসনের লোকেরা আবদুল লতিফ নামে ৭০ বছরের একজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। তার ছেলে মমিনুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদনসহ ধরনা দিয়েও কোনো বিচার পাচ্ছেন না। অথচ এই সরকারের লোকেরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে বলতে মুখে একেবারে ফেনা তুলে ফেলেন। এহেন অবস্থা থেকে মানুষ এখন প্রতি মুহূর্তেই মুক্তি চায়। কিন্তু কেউ কিছু মুখে বলতে পারছেন না। আর মিডিয়ায় শুধু সরকারের উন্নয়নের জোয়ার ছাড়া আর কিছুই নেই। অথচ রাষ্ট্রীয় কোষাগার পর্যন্ত খালি করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ফোকলা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তের প্রতিবেদন তৈরি হলেও এর সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করতে পারছেন না অর্থমন্ত্রী। আধিপত্যবাদ এমনভাবে গ্রাস করে চলেছে যে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্ধ সরকার রামপালের মতো দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, আসলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর কঠোর দমননীতি চালিয়ে কোনো রকমের নির্বাচন ছাড়াই টিকে থাকতে চাচ্ছে সরকার। বর্তমান সরকারের এই দমননীতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, এখন প্রতিদিনই বিরোধী দলের কোনো না কোনো নেতা-কর্মীকে ঘর থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ এখন যেন নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনবারের চার্জশিটে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের নাম না থাকলেও এ সরকার ক্ষমতায় এসে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হীনউদ্দেশ্যে প্রতিশোধপরায়ণতা থেকে তার নাম এই মামলায় জড়িয়েছে। বেকসুর খালাস পাওয়া মামলায় পরে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি অবিলম্বে বিএনপিসহ গ্রেফতারকৃত সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবির পাশাপাশি তার দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা অভিযোগে দায়ের সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, বিগত উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রহসনের জাতীয় নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের একপেশে ও প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করা হলে বিএনপি কখনই অংশ নেবে না। শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ফারুক তার নির্বাচনী এলাকা সেনবাগে দলীয় দৃঢ় অবস্থা বজায় রাখার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইচ্ছা এবং চেষ্টা থাকলে যে কোনো অবস্থাতেই নিজের এলাকায় সাংগঠনিক ভিত শক্ত রাখা সম্ভব। সারা দেশে কমবেশি ইউপি নির্বাচনে জোরজবরদস্তি হলেও সেনবাগ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এবার বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেছে। তা ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটিতে তো আগেই জয়ী হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে শুধু ঢাকায় বসে থাকলে আর ‘মনোনয়ন বেপারিদের’ মতো দলীয় কার্যালয়ে ঘুর ঘুর করলে এটা আদৌ সম্ভব হতো না।

 

 

সর্বশেষ খবর