মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুই শিশুর ওপর এ কেমন বর্বরতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও দিনাজপুর প্রতিনিধি

দরিদ্র ঘরের একমাত্র সন্তান পাঁচ বছরের শিশু। খেলাধুলা আর হই-হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখত সারা বাড়ি। সেই শিশুটি এখন হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তার মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন চিহ্ন। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে অবুঝ শিশুটি। স্যালাইন চলছে তার শরীরে। তবে এখন চোখ খুলে তাকাচ্ছে সে। এ অভিযোগে গতকাল অভিযুক্ত প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শিশুটির বাবা সাংবাদিকদের জানান, পার্বতীপুরের রামপুর ইউনিয়নের জমিরহাট এলাকার তকেয়াপাড়া গ্রামের তার বাড়ি। তার পাঁচ বছরের মেয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির বাইরে খেলতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়। সন্তানের সন্ধানে তিনি এলাকায় মাইকিংও করেন। খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে রাত ১১টার দিকে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। পরদিন বুধবার ভোর ৬টায় তার মেয়েকে বাড়ির পাশের হলদি খেত থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর তাকে প্রথমে ল্যাম্ব মিশনারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিশুটির বাবা আরও জানান, তার মেয়ের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ ছাড়া ওই শিশুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের দাগ রয়েছে। প্রতিদিন তার ড্রেসিং করতে হচ্ছে। ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না সে। তার মধ্যে এখনো কাজ করছে অজানা আতঙ্ক। শিশুটির সুস্থ হতে সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে একই গ্রামের প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম (৪২) ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে (৪৮) আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল আলম জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ দিনাজপুর শহর থেকে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া অসুস্থ শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

স্কুলছাত্রকে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন : রাজশাহীর বাঘায় মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে এক স্কুলছাত্রকে পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনকারী তিনজন পরস্পর ভাই। আহত অবস্থায় স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল সকালে উপজেলার নারায়ণপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকালে বাঘা থানা পুলিশ নির্যাতনকারীদের একজনকে আটক করেছে। তিনি হলেন পুলিশ সদস্য হাফিজুল ইসলাম ওরফে জিল্লুর। বাকিরা পলাতক। নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্র মনিরুল ইসলাম নারায়ণপুর গাওপাড়া গ্রামের মিঠু আলীর ছেলে এবং বাঘা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চকছাতারী গ্রামের হারান প্রামাণিকের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, তার ভাই পুলিশ সদস্য হাফিজুল ইসলাম ওরফে জিল্লুর ও অপর ভাই মহিদুল ইসলাম নারায়ণপুর মাছ বাজার থেকে স্কুলছাত্র মনিরুলকে টেনেহিঁচড়ে নারায়ণপুর বাজারের বিপ্লব আলীর স-মিলের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তারা মনিরুলের বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে তাকে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। একপর্যায়ে মনিরুলের পায়ে দড়ি বেঁধে আনোয়ার হোসেনের মোবাইল সেট মেরামতের দোকানের বাঁশের আড়ার সঙ্গে উল্টা করে টানিয়ে তাকে পেটানো হয়। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে মনিরুলকে উদ্ধার করে। এদিকে শিশু নির্যাতনের খবর বাজারে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে নির্যাতনকারী জাহাঙ্গীর, হাফিজুল ও মহিদুল পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে বাঘা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্র মনিরুল ইসলাম জানায়, মোবাইল চুরির কথা বলে সোমবার সকালে নারায়ণপুর বাজারের মাছ বাজার থেকে ওরা তিনভাই তাকে ধরে নিয়ে আনোয়ারের মোবাইলের দোকানের বারান্দার বাঁশের আড়ার সঙ্গে উল্টো করে তাকে বেঁধে মারপিট করতে থাকে। সে তাদের মোবাইল নেয়নি বলে জানালেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। পরে ব্যবসায়ীরা তাকে উদ্ধার করেন। বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কৌশিক রায় জানান, মনিরের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন আছে। বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী মাহমুদ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। নির্যাতনকারীরা তার আগেই পালিয়ে যায়। পরে বিকালে নির্যাতনকারীদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি হলেন পুলিশ সদস্য হাফিজুল ইসলাম জিল্লুর। বাকিরা পলাতক।

 

সর্বশেষ খবর