বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হতাশা রাজশাহী খুলনা বরিশালে

প্রতিদিন ডেস্ক

হতাশা রাজশাহী খুলনা বরিশালে

রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল থেকে কোনো সিনিয়র নেতা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে স্থান না পাওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের এই তিন বিভাগীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী জানান, একসময় আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান। এরপর আর কেউ কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাননি ঐতিহ্যবাহী এই দলটির। গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এবার স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল কেন্দ্রে রাজশাহীর কোনো নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা কমিটিতে রাজশাহীর কোনো নেতার নাম না থাকায় হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সম্মেলনের শুরু থেকে কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার দাবির তালিকায় নাম ছিল এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের। এই দুই নেতা এবার কেন্দ্রে পদ পাচ্ছেন এমন প্রত্যাশা করেছিলেন তাদের সমর্থকরা। লিটন সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও শাহরিয়ার সম্পাদকীয় কোনো পদ পেতে পারেন বলে আশা করেছিলেন তারা। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনো পদ না পাওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে তাদের সমর্থকদের মধ্যে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার জানান, দলের সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু এবার কমিটিতে রাজশাহী একেবারেই উপেক্ষিত। এ নিয়ে তারা হতাশ। জাতীয় নেতার সন্তান হিসেবে শুধু নয়, সাংগঠনিক দিক বিবেচনা করেও খায়রুজ্জামান লিটনকে কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা দেখতে চেয়েছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত তারা আশা ছাড়েননি। দলের প্রধান তাদের হতাশ করবেন না বলেও মনে করেন তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, রাজশাহীর কোনো নেতাই কেন্দ্রে জায়গা পেলেন না, এটা তাদের হতাশ করেছে। তবে দলের প্রধান সবদিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দল ও দেশের স্বার্থে সভানেত্রী যে কমিটি জাতিকে উপহার দেবেন, তাদের সঙ্গেই কাজ করবেন তারা। আগামীর রাজনীতিতে রাজশাহীর কাউকে কেন্দ্রে স্থান দিলে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে গতি আরও বাড়ত বলে মনে করেন তিনি। নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, সদ্য ঘোষিত আওয়ামী লীগের কমিটিতে খুলনার সিনিয়র নেতাদের স্থান না থাকায় মাঠপর্যায়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দুই দফায় ঘোষিত সভাপতি-সম্পাদক মণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান হয়নি খুলনা মহানগর ও জেলা পর্যায়ের কোনো নেতার। ফলে এবারও জাতীয় কমিটিতে খুলনার প্রতিনিধিত্ব আপাতত নেই। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, বিভাগীয় জেলা শহর হিসেবে খুলনায় বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে যে উন্নয়নযজ্ঞ চলছে তার তদারকি ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে খুলনার নেতাদের যুক্ত থাকা দরকার ছিল। এ কারণে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কমপক্ষে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পদে খুলনার নেতারা থাকবেন এ প্রত্যাশা ছিল তৃণমূলের কমিটির। খুলনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী তালুকদার আবদুল খালেক এমপি, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, শেখ হারুনুর রশীদ, সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপির মতো দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও যোগ্য নেতা রয়েছেন। এ ছাড়া আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান এমপি এবং এস এম কামালের মতো তারুণ্যোদীপ্ত নেতা রাজনীতিতে রয়েছেন, যাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মূল্যায়ন করার সুযোগ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত  নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ থাকলেও সরাসরি এ বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, সভাপতি মণ্ডলীতে বৃহত্তর খুলনা, গোপালগঞ্জের কর্নেল ফারুক খান (অব.), যশোরের পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে কুষ্টিয়ার রাজনীতিক মাহবুব-উল আলম হানিফ থাকলেও তাদের কারও রাজনীতি খুলনাকেন্দ্রিক নয়। এ ছাড়া নতুন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান একসময় খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও তিনিও ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণার পর খুলনার নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। তবে ওই বৈঠকে শুধু শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। নতুন কমিটি সম্পর্কে কোনো মতামত বা আলোচনার সুযোগ সেখানে ছিল না। তারপরও নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা আগামীতে আওয়ামী লীগ আরও বেশি শক্তিশালী হবে। নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত নেতৃত্বে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির নাম না দেখে হতাশ হয়েছেন তার অনুসারী হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক। তারা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি তার বাবা তৎকালীন মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ছেলে সুকান্ত বাবুসহ পরিবারের ৬ সদস্য হারিয়েছেন। ঘাতকদের গুলিতে রক্তাক্ত হয়েছেন তার মা এবং সহধর্মিণী। দলের প্রতি তার আত্মত্যাগ, মেধা, দক্ষতা, বিচক্ষণতা এবং বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার কারণেই এবার প্রত্যাশিতভাবে দলের সভাপতি মণ্ডলীতে হাসানাত আবদুল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন তারা। এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছিলেন হাসানাত আবদুল্লাহ। এ ছাড়া বিভাগের ৬ জেলায় বিগত উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যোগ্য নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দিয়ে ৯৯ ভাগ প্রার্থীকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এসব কারণে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য পদে এবার হাসানাত আবদুল্লাহর স্থান হবে এটা আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই ধরে নিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। কিন্তু রবিবার ঘোষিত ১৪ সদস্যের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্যের তালিকায় তার নাম না দেখে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হাসানাত অনুসারীরা। কমিটি ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ হলেও বরিশালে কোনো আনন্দ মিছিল কিংবা মিষ্টি বিতরণ করেনি আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।  জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আনিচুর রহমান বলেন, একজন আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে তিনি তার রাজনৈতিক গুরু আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর রাজনৈতিক উন্নতি চান। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং তার পরিবারের আত্মত্যাগের কথা সবার জানা। ’৭৫-পরবর্তী সময় থেকে তিনি বরিশালে নৌকার হাল ধরেছেন। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী করেছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর