বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগের ওরা পাঁচজন

শাবান মাহমুদ

ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন পাঁচ নেতা এবার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে। দীর্ঘ ৬৭ বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক আওয়ামী লীগে এবারই প্রথম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন ছাত্রলীগের একসময়ের সভাপতি ওবায়দুল কাদের। এর আগে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন প্রয়াত জননেতা আবদুর রাজ্জাক। তিনি ছিলেন পাকিস্তান আমলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ বলে বিবেচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দুজনই ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তারা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি ও আবদুর রহমান এমপি। এ ছাড়াও দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। ছাত্রলীগের আরেক সভাপতি ও জাকসুর সাবেক ভিপি এনামুল হক শামীম নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগের কোনো কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছাত্রলীগের প্রভাব এবারের মতো দেখা যায়নি।

ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতির দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আস্থাভাজন নেতা ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় সর্বস্তরের নেতা-কর্মী উত্ফুল্ল। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি তার রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রায় সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের। কারাগারে বন্দী অবস্থায় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। টানা চার বছর ছিলেন সভাপতি; এ সময় ছাত্রলীগ সংগঠিত করতে ওবায়দুল কাদের চষে বেড়িয়েছেন সারা দেশ। ১৯৮১ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেন তিনি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর শুরু হয় ওবায়দুল কাদেরের নতুন পথচলা। শেখ হাসিনার ছায়াসঙ্গীর মতোই ৩৫ বছর ধরে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটেছেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে শেখ হাসিনার নির্দেশে সংগ্রাম করেছেন নিরন্তর। দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আর প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদের ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠলেন একজন ঝানু রাজনীতিক। রাজনীতির দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কারাভোগ করেছেন বার বার। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে টানা তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব পেলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। স্বৈরাচারী সরকারের নিপীড়ন আর নিষ্পেষণে আওয়ামী লীগ যখন জর্জরিত এমন এক দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রাজপথের সাহসী নেতা নানক। ১৯৮৩ থেকে ’৮৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকা নানক সারা দেশে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে কাজ করেন। আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান থাকাকালে নতুন করে আলোচনায় আসেন অকুতোভয় এই নেতা। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপ্রত্যাশিত ভরাডুবির পর যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান নানক। যুবলীগকে শক্তিশালীকরণের জন্য তার নিরলস চেষ্টা দলে প্রশংসিত হয়। গত সরকারের আমলে তিনি সরকারের এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তখন আশির দশকের মাঝামাঝি। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশে চলছে উত্তাল আন্দোলন। এমনি এক দুর্যোগ আর রাজনৈতিক সংকটে ১৯৮৬ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। আবদুর রহমান একজন পরিশ্রমী নেতা হিসেবে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে কাজ করেন নিরলস। আওয়ামী লীগে এর আগের কমিটিতে তিনি কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় ‘কর্মীবান্ধব নেতা’ হিসেবে তার একটা বিশেষ পরিচিতি তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। ১৯৮৮ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা এই নেতা টানা চার বছর সংগঠন সাজিয়েছেন। এর আগে পরপর দুবার ছিলেন আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক। ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে উঠে আসা অসীম কুমার উকিল দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে প্রিয় মুখ। কর্মীবান্ধব অসীম কুমার উকিল প্রায় তিন দশক ধরে আওয়ামী রাজনীতিতে প্রচ্ছন্ন ভূমিকা রেখে দল সংগঠনে কাজ করে গেছেন।

আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জাকসুর সাবেক ভিপি এ কে এম এনামুল হক শামীম। ‘প্রবীণকে শ্রদ্ধা-সম্মান আর নবীনকে স্নেহ-মমতা’ এই দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ শামীম। শরীয়তপুরের সখীপুরের চরভাগা গ্রামের সন্তান এনামুল হক শামীমের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৯ মার্চ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধবী ছাত্র হিসেবেই ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৮৯ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা আর ম্যান্ডেট নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী সংসদ—জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন শামীম। ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত ১৯৯৪ সালে। সংগঠনের জনপ্রিয় নেতা হিসেবে সারা দেশে ছাত্রলীগে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন শামীম। তার নেতৃত্বের সময় ছাত্রলীগে বার বার ইতিহাস রচিত হয়। নব্বই দশকের শুরু থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রামে শামীমের ছিল সুদৃঢ় ভূমিকা। শামীমের সময়ই ১৯৯৫ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর শাপলা চত্বরে আয়োজিত ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক সমাবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী হিসেবে ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দেন। সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার কারানির্যাতিত হয়েছেন শামীম। ১৯৯১ সালে গঠিত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে গঠিত ঐতিহাসিক জনতার মঞ্চের নেতৃত্বেও ছাত্রলীগের পক্ষে শামীমের সাহসী ভূমিকা দলে আলোচিত হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২১ বছরের সংগ্রামের পর ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের নেপথ্য আন্দোলন সংগ্রামে শামীম-পান্নার নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ ঐতিহাসিক ভূমিকায় ছিল বলেও মনে করে আওয়ামী লীগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর