বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ ঠেকানোর কৌশলে নব্য জেএমবি

মির্জা মেহেদী তমাল

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ ঠেকাতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে উগ্রপন্থি ধর্মীয় সংগঠন নব্য জেএমবি। তারা জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে এ সংক্রান্ত লিফলেট বিলি করছে। এ ধরনের একটি লিফলেট গোয়েন্দাদের হাতে পড়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র এ তথ্য দিয়ে বলেছে, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু তাদের আর জনসম্মুখে আনা হবে না। কাউন্সিলিং ও পুনর্বাসনের পর আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের আড়ালে রেখে স্বাভাবিক জীবন গড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্যরা আত্মসমর্পণ শুরু করে। তবে ছেড়ে আসায় ওইসব জঙ্গি সংগঠনই তাদের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের হত্যার হুমকি দিয়ে এরই মধ্যে লিফলেট বিলি করছে নব্য জেএমবি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ইতিপূর্বে জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করার পথ থেকে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, তাদেরকে স্বাগত জানানো হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে জড়িতদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে আনবেই। জঙ্গিবাদ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, জঙ্গিবাদ একটি ঘৃণিত কাজ। ইতিমধ্যে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করতে গিয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের লাশ পরিবার পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। এর চেয়ে বড় ঘৃণার কাজ আর হতে পারে না।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানোর পর অনেকেই সেই সুযোগ নিয়েছে। কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের জনসম্মুখে আনা হচ্ছে না। কারণ জঙ্গিরা ইতিমধ্যে তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে লিফলেট বিলি করেছে। ওই লিফলেটে লেখা হয়েছে, যারা দল পরিত্যাগ করবে তারা কাফের ও মুরতাদ। তাদের পরিণাম কাফের-মুরতাদের মতো হবে। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, বেশকিছু জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের নাম-ঠিকানা আমাদের কাছে আছে। তবে তারা নাম-ঠিকানা প্রচার করতে চায় না, আমরাও চাই না। গাজীপুরে জঙ্গি আস্তানায় একজনের থাকার কথা ছিল। সে আগেই আত্মসমর্পণ করে, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ওইসব নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতে চাই না। তাদের কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বেশি সংখ্যক জঙ্গিরা দল ছেড়ে চলে আসছে। এখন আত্মসমর্পণকারীদের ফেরানোর চেষ্টা করছে তারা। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। নারী জঙ্গি তেমন আত্মসমর্পণ করেনি। এমনিতেও নারী জঙ্গির সংখ্যা কম।’ প্রসঙ্গত, গত ১১ আগস্ট যশোরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের তিন সদস্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশ জানিয়েছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাদ্দাম ইয়াসির সজল (৩২), রায়হান আহমেদ (২০) ও মেহেদী হাসান পলাশ (২০) নামের তিন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে। এরপর ৫ অক্টোবর বগুড়ার শহীদ স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে জঙ্গি আবদুল হাকিম ও মাহমুদ।

সর্বশেষ খবর