শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ মতামত

দ্রুত বিচার ও সামাজিক আন্দোলন দরকার

মাহমুদ আজহার

সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়কে দায়ী করছেন অপরাধবিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, সামাজিক অপরাধ নির্মূলে আইনকে যুগোপযোগী করার পাশাপাশি অপরাধের বিচারে দীর্ঘসূত্রতা কাটাতে হবে। অপরাধী যে-ই হোক, তালে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব মন্তব্য করেন অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দুজন এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক। বিশ্লেষকদের মতে, অবাধ আকাশ সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোবাইল, ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুধু শহরকেন্দ্রিকই নয়, গ্রামে পর্যন্ত চলে গেছে। পর্নোগ্রাফি এখন নিয়ন্ত্রণহীন। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীসহ সব শ্রেণিই এদিকে ঝুঁকে পড়ছে। এতে পারিবারিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে। প্রেম-ভালোবাসা রূপ নিয়েছে শারীরিক সম্পর্কে। তবে এগুলো শুধু আইনিভাবেই মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। এটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রমেই উন্নত রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছে। মোবাইল, ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুকসহ নানা প্রযুক্তি এখন শুধু শহরেই নয়, গ্রামে পর্যন্ত চলে গেছে। সামাজিক অবকাঠামোও ভেঙে পড়ছে। পর্নোগ্রাফির নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এখন গ্রামগঞ্জের ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত এদিকে ঝুঁকে পড়ছে। এখন প্রেম মানেই হচ্ছে শারীরিক সম্পর্ক। আধুনিক সভ্যতাকে আমরা এখনো খাপ খাওয়াতে পারছি না। পুলিশিং বা আইনি ব্যবস্থাও আরও উন্নত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যার বিচার পাওয়ার কথা, টাকা, ভয়ভীতি, রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা কারণে ন্যায়বিচার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সে। এ কারণে আমাদের আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি গণসচেতনতামূলক আন্দোলন করতে হবে। স্কুল-কলেজে নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি কাউন্সেলিংও জরুরি। আমাদের ক্রমেই পারিবারিক সম্পর্ক ভেঙে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবিনা শরমীনের মতে, ‘আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাতেই এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। সবাই এখন ভোগবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সবটাই পেতে চাই, না পেলেই খুনোখুনিসহ নানা অপরাধ প্রবণতার দিকে পা বাড়াচ্ছে। দুঃখজনক হলো, শিশু, কিশোরীদের ওপরও পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ছে কেউ কেউ। এখানে শুধু আইনি কাঠামোই জরুরি নয়, পারিবারিক-সামাজিক বন্ধনগুলো আরও সুদৃঢ় করতে হবে। আকাশ সংস্কৃতিরও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। টাকা, ভোগবিলাসের প্রতি বেশি গুরুত্ব না দিয়ে নৈতিক-মানবিক মূল্যবোধকেই প্রাধান্য দিতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বলেন, ‘বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতার কারণে সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। বছরের পর বছর বিচার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। বিশেষ করে একটি অপরাধীকে ৯৯ ভাগ প্রমাণের পর এক দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা কঠোর শাস্তি থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। এতে তারা আশকারা পেয়ে আরও অপরাধ প্রবণতায় জড়িত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ আমলে ফৌজদারি কার্যবিধি অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়। এটাও যুযোপযোগী করা জরুরি। তবে ২০০১ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনেকটাই বাস্তবতার নিরিখে করা হয়। এটাও কঠোর আইন। এ ক্ষেত্রে কোনো অপরাধীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জামিন নিতে হয়। কিন্তু সেই আইনেরও অপব্যবহার করা হচ্ছে। সামাজিক অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আইনের শাসনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও জরুরি। বিশেষ করে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষাও থাকতে হবে। তাহলেই অনেকাংশে সামাজিক অপরাধ দূর করা সম্ভব হবে।’

সর্বশেষ খবর