বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হাসিনার দেওয়া সুযোগ খালেদা কাজে লাগাতে পারেননি

শফিউল আলম দোলন

হাসিনার দেওয়া সুযোগ খালেদা কাজে লাগাতে পারেননি

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার রাজনৈতিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বেগম খালেদা জিয়াকে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া কাজে লাগাতে পারেননি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে ভালো ‘খেল’ খেলেছেন। সম্মেলনের প্রতিটি   সিদ্ধান্তে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। যারা একটু-আধটু ঘাড় তেড়ামি করেছেন, কিংবা আঁকাবাঁকা পথে যেতে চেয়েছেন তাদের সবাইকেই তিনি সাইড করে দিয়েছেন। তার কথা না শোনায় সৈয়দ আশরাফের মতো নেতাকেও বিদায় করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। আগামী নির্বাচনের জন্য ওবায়দুল কাদের হলো দলের ‘গ্রেট চয়েজ’। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে সদ্য অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে এভাবেই মূল্যায়ন করেন তিনি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, রাজধানীতে সপ্তাহব্যাপী আলোর ঝলকানিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উৎসবমুখর সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের বিরাট সমাবেশ ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যেও তিনি নিজের সিদ্ধান্ত ও স্বার্থ দুটিই রেখেছেন অটুট ও অক্ষুণ্ন। হাসিমুখে দেওয়া বক্তৃতায় সারা দেশ থেকে আসা তৃণমূল নেতাদের দিয়েছেন আগামী দিনের করণীয় ও নির্দেশনা। নিজের পরিবারের সদস্যদেরও যাকে যেখানে রাখার সেখানে রেখে আরেকবার দিয়েছেন বিচক্ষণতার পরিচয়। নিজের পুত্রকে দলীয় কোনো পদে না রাখলেও রাজনীতির খেলার মাঠে ‘এক্সট্রা প্লেয়ার’ হিসেবে রেখে দিয়েছেন একেবারে প্রথম সারিতে। যাতে করে যে কোনো মুহূর্তে তাকে মাঠে নামাতে পারেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, বিদেশিদের দিয়ে চাপ দেওয়ানোর খেসারত হিসেবে একেবারে রাজনীতি থেকেই প্রায় বিদায় নেওয়ার উপক্রম হয়েছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। কোণঠাসা হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন একসময়ের জাঁদরেল নেতা তোফায়েল আহমেদ। একই পরিস্থিতি আমির হোসেন আমুরও। শেখ মণির ছেলেসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের ভূমিকার কথাও মনে রেখেছেন তিনি। সম্মেলনে ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে ‘এক্সপোজ’ করেননি। নিজের বোন শেখ রেহানাকে রেখেছেন ‘আউটলাইনে’। সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী ও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শামসুল হকের নাম মুখে উচ্চারণ করলেও কাগজপত্রে কোথাও রাখা হয়নি।

অন্যদিকে রাজনৈতিক ‘চাল’ ভালো দিলেও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন শেখ হাসিনা। গণতন্ত্র, সুশাসন, অনিয়ম, দুর্নীতি, ভারতকে ট্রানজিট প্রদানসহ সরকারি দলের লোকজনের লুটপাটের কোনো কথা সম্মেলনের আলোচনায় উত্থাপন করেননি। এমনকি ক্ষতিকর রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কিংবা কম দামে মানুষকে চাল খাওয়ানো নিয়ে ‘চালবাজি’র কথাও উচ্চারণ করেননি। তার পিতা একসময় সব রাজনৈতিক দল বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে প্রজ্ঞার দিক থেকে শেখ হাসিনা তার পিতাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দুজনই দলের পুরো ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো, একজন সম্মেলনে সুকৌশলে অন্যদের দিয়ে নিজের এবং নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করিয়ে নিয়েছেন। আর বহু হিসাব-নিকাশ করে নিজের ছেলেকে সরাসরি দলের কোনো পদ-পদবি না দিয়ে মাঠের ভিতরে ‘এক্সট্রা প্লেয়ার’ হিসেবে সামনের সারিতে বসিয়ে প্রস্তুত রেখেছেন। আর অন্যজন সম্মেলনের আগেই নিজের এবং নিজের ছেলের নামে দলের শীর্ষস্থানীয় পদ দুটি ঘোষণা করিয়ে নিয়েছেন। বস্তুত তারা দুজনই এককেন্দ্রিক ক্ষমতার অধিকারিণী।

সর্বশেষ খবর