বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি নিয়ে ফের লড়াই পুলিশ-র‌্যাবের

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গি নিয়ে ফের লড়াই শুরু হয়েছে র‌্যাব ও পুলিশের মধ্যে। কদিন আগেই ঘটা করে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব যাকে নব্য জেএমবির প্রধান বলেছিল, আজ তাকে ওই জঙ্গি সংগঠনের তৃতীয় সারির নেতা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, সারোয়ার জাহান জেএমবির তৃতীয় সারির নেতা। তবে আগের অবস্থানেই অনড় র‌্যাব। র‌্যাবের পক্ষ থেকে আবারও বলা হয়েছে, উদ্ধার নথিপত্রের তথ্য অনুসারেই সবকিছু গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করা হয়েছিল। ২২ অক্টোবর র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়, রাজধানীর গুলশানে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করে নব্য জেএমবি। নব্য জেএমবির বাংলাদেশের প্রধান সারোয়ার জাহান ওরফে আবদুর রহমান ওরফে শাইখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। তার বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নথি বিশ্লেষণ করে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাভেলা ছাড়াও নব্য জেএমবি আরও অন্তত ২২টি হামলা চালিয়েছে। ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তামিম চৌধুরীর আস্তানায় সিটিটিসি যখন অভিযান চালায়, সে সময় এ দুজনের মধ্যে কথোপকথন হয়। বিশেষ একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করে। সম্মেলনে আশুলিয়ার আস্তানা থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন নথিপত্র প্রদর্শন করা হয়। এদিকে ২৬ আগস্ট রাত ২টা ২৩ থেকে ২টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত তামিম ও সারোয়ারের কথোপকথন প্রসঙ্গে সিটিপ্রধান বলেন, ‘তামিম চৌধুরীকে ঘিরে ফেলা হয় ২৭ আগস্ট ভোর সোয়া ৬টায়। পরবর্তী সময়ে ডিবির তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভোর সোয়া ৬টা থেকে ৬টা ২০ মিনিটের মধ্যে। এর আগে ঘিরে ফেলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। অন্য কোনো সংস্থা বা ইউনিট ঘিরে থাকতে পারে। ওই সময় তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয়নি। যোগাযোগ যতটুকু হয়েছে তা তানভীর কাদেরীর সঙ্গে। আর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে আমরা কিছু রেকর্ড পেয়েছি।’ সারোয়ার জাহান ওরফে আবদুর রহমান নব্য জেএমবির কোন সারির নেতা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তার নাম আমাদের তদন্তেও এসেছে। মূলত তামিমের ডেপুটিদের পরের ধাপের নেতা হিসেবে আমরা তার নাম পেয়েছি। তামিম চৌধুরী নব্য জেএমবির নেতা হিসেবে তার পরের সারির অর্থাৎ দ্বিতীয় সারির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। আবদুর রহমান যে পর্যায়ের ছিল তাতে তার সঙ্গে তামিমের সরাসরি যোগাযোগ খুব কম ছিল। কখনো কখনো মিটিংয়ে দেখা হয়েছে তাদের।’ তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, ‘ফৌজদারি তদন্ত আসলে পরিচালিত হয় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। এখানে রচনা বা ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক করার কোনো সুযোগ নেই। তথ্য-প্রমাণ বা সাক্ষ্য-প্রমাণে যা আছে সেটি করা হয়। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির সব নিয়ম মেনেই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে একদল পেশাদার অফিসার তদন্ত কর্মকর্তাকে সাহায্য করে তদন্ত সম্পন্ন করছেন। যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকাজও শুরু হয়েছে।’ বর্তমানে কারা নব্য জেএমবি পরিচালনা করছে— এ প্রশ্নে মনিরুল বলেন, ‘যাদের আটক করা সম্ভব হয়নি তারাই এখন নব্য জেএমবির দায়িত্ব নিয়েছে। নব্য জেএমবির সঙ্গে পুরনো জেএমবির কয়েকজন যোগ দিয়েছে। তবে তাদের মধ্যে এখনো অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে। এর ফলে পুরনো জেএমবির কাউকে নব্য জেএমবির গুরুত্বপূর্ণ পদে দেওয়া হয়নি বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।’ এদিকে মনিরুলের বক্তব্য প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘র‌্যাবের পক্ষ থেকে কোনো কিছু দাবি করা হয়নি। আশুলিয়ার ওই আস্তানায় অভিযানের পর উদ্ধার নথিপত্রে আমরা যা পেয়েছি তা-ই উপস্থাপন করা হয়েছে। নথিপত্র অনুসারে সারোয়ার জাহানকেই আমির ঘোষণা করেছিল নব্য জেএমবি। বিভিন্ন দুর্যোগ মুহূর্তে তার দেওয়া পরামর্শ এবং কথোপকথনের বিষয়টিও আমরা উপস্থাপন করেছি।’ চার মাস আগে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাভেলা হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির স্থানীয় নেতাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বিএনপি নেতা কাইয়ুমের অবস্থান সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, তিনি দেশের বাইরে থাকায় তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর