শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুঃখেও খালেদাকে হেসে কাজ করতে হবে

------------জাফরুল্লাহ চৌধুরী

দুঃখেও খালেদাকে হেসে কাজ করতে হবে

দুঃখের মধ্যেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হেসে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি জানি খালেদা জিয়া মানসিকভাবে নানা সমস্যায় রয়েছেন। তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ছেড়ে দিতে হয়েছে। আদরের ছোট ছেলেটি মারা গেছে। বড় ছেলেরও সাজা দেওয়া হয়েছে। বিদেশে পড়ে আছে। কিন্তু দুঃখের মধ্যেও জাতির জন্য হেসে কাজ করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুশাসনের জন্য কাজ করে যেতে হবে।’ ক্ষমতা হারানোর ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় বিএনপি নির্জীব হয়ে গেছে। হতাশায় ভুগছে। আগামী দিন নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি একটি জনতার সনদ তৈরির কথা বলেছিলাম। ক্ষমতায় গেলে কী করবে তারই একটি রূপরেখা। মনে হয়, বিএনপি এটার গুরুত্ব দেয়নি। বিশাল আকারের কমিটি দিয়েও বিএনপি তেমন কোনো সুফল পেয়েছে বলে মনে হয় না। সংগঠন এখনো অনেক দুর্বল। আন্দোলনে যাওয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তিও তাদের মধ্যে নেই।’ বিএনপি সমর্থিত এই বুদ্ধিজীবী বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রের জন্য খালেদা জিয়াকে আবারও মাঠে নামতে হবে। সেই সাংগঠনিক শক্তি এখনই প্রস্তুত করতে হবে। কারণ আমাদের দেশে এখন আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি। আমাদের এখানে অন্য কোনো দল শক্তিশালী নয়। সিপিবি বা বাসদের একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তারা অতি ক্ষুদ্র দল। ড. কামালের দলও কিছুই করতে পারছে না। তবে আমার ভয় হয়, বিএনপি যদি এভাবে ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে তারা ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন মাঠে থাকবে জামায়াত। আমার বিশ্বাস জামায়াত জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে। পরে ময়দানে তারাই থাকবে। আগামী নির্বাচনে তাদের যদি বাধা না দেওয়া হয়, তাহলে তাদের আসন বাড়তেই থাকবে।’ দুঃখ প্রকাশ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘বিএনপির মতো দলের ওপর নির্মম অত্যাচার হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সরকার সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু সরকারের সফলতা হলো, সারা পৃথিবীকে বোকা বানাতে পেরেছে। বিশ্ব ভুলে গেছে বিনা ভোটের সরকারকে। সরকার দুটো জিনিস দিয়ে পৃথিবীকে বোকা বানিয়েছে। একটা হলো, উন্নয়ন ও আরেকটি হলো জঙ্গিবাদ। বিএনপি মার খেয়ে এখন এমন অবস্থা হয়েছে, তারা এখন কোনো কিছুই চিন্তাই করতে পারছে না। তারা এখন অবসাদগ্রস্ত। এই ফাঁকে বিএনপির কিছু লোক বুঝেই হোক, না বুঝেই হোক সব সময় খালেদা জিয়াকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে বাধা দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, মার খেতে হলে উঠে দাঁড়াতে হয়, চেষ্টা করতে হয়। কিন্তু বিএনপি তা করেনি। আমার মতে, হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বেগম জিয়ার যাওয়া উচিত ছিল। সেখানে গিয়ে তিনি বলতে পারতেন, আপনারা গ্রেফতার, নির্যাতন ও নির্মমতা বন্ধ করুন। কারাগারে বন্দী ১৩-১৪ হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীকে ছেড়ে দিন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ছেড়ে দেন।’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়া বলতে পারতেন, আপনি জিঘাংসা বন্ধ করুন। কাদের সিদ্দিকী ও ড. কামালকে দাওয়াত দেননি কেন—সেই প্রশ্নও তুলতে পারতেন। বলতে পারতেন, আপনি যে মাঠ ব্যবহার করছেন, সেটা আমাকে কেন ব্যবহার করতে দেন না। যে কোনো রাজনৈতিক দলকে এ মাঠ ব্যবহার করতে দিন। গাড়ি ভাঙচুর না করে এখানে সমাবেশের অনুমতি দেন। সবার কথা বলার অধিকার দেন। আইসিটি অ্যাক্ট ও রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ বাতিল করুন। অনেক কথাই বলার সুযোগ ছিল। সেখানে উনিই হতেন ওই সম্মেলনের প্রধান অতিথি। তাছাড়া বিএনপি এখন সরকারের সঙ্গে আলোচনা চায়। এটাও একটি আলোচনার শুভ যাত্রা হতে পারত। তারা অনেক বড় ভুল করেছে। আমার আশ্চর্য লাগে, বিএনপির মধ্যে কি কোনো শিক্ষিত ব্যক্তি নেই! তাদের বুদ্ধিজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নেই! তারা ইতিবাচক পরামর্শ দিতে পারে না?’ বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া খোলা চিঠির কথা স্মরণ করে তিনি আবারও বলেন, ‘চেয়ারপারসনের প্রতি সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির মিটিং করা উচিত। নেতা-কর্মীদের জন্য তার বাড়ির দুয়ার উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যেভাবে শেখ হাসিনার কাছে নেতা-কর্মীরা যেতে পারে, সেভাবে যেন তার কাছেও যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও নেতা-কর্মীদের জন্য হাসিনার দুয়ার উন্মুক্ত। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ভালো করে মাঠে নামলে হয় সরকারে যাবে না হয় শক্তিশালী বিরোধী দলে যাবে। দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদের ঘুম ভাঙবে কবে! দু-চারজন যারা এই সম্মেলনে যেতে প্রতিহত করেছে, জনসম্মুখে তাদের কাছে জবাব চাওয়া দরকার। কেন করেছে এটা। বিএনপিকে বলতে হবে, আওয়ামী লীগ-আর বিএনপির শাসনের মধ্যে তফাত কী। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে তফাত কী। শুধু পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটলেই হবে না, বাকশাল আর বাকশাল বললে হবে না। তুলনা করতে হবে, তাদের কাউন্সিল আর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের। এটা নিয়েও একটি বৈঠক করেনি বিএনপি। এটা নিয়ে দলের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা করতে পারত। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কী শেখা উচিত বা উচিত নয়, তাও নিয়ে আলোচনা করা যেত।’

সর্বশেষ খবর