শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর আসামির বিচার হবে অনলাইনে

-----------প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে অনলাইনে বিচার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছেন, সারা দেশের আদালতগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে নবনির্মিত যে কারাগার (কেরানীগঞ্জ) আছে, সেগুলোর সঙ্গেই কোর্ট রুম স্থাপন করা হবে। যেসব আসামি ভয়ঙ্কর ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির, যাদের বারবার আদালতে আনা-নেওয়া করাটা সমস্যা, তাদের জন্য ওইখানেই আদালত বসবে। সেখানে তাদের আইনজীবীরা থাকবেন এবং অনলাইনে বিচার হবে। অনলাইনের বিচার কার্যক্রম শুরু করতে আমি ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি। গতকাল দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রকল্প তিনটি হলো— শিশুদের সুরক্ষায় ‘১০৯৮’ হেল্পলাইন, বাগেরহাটের মংলায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন শস্য ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কনক্রিট গ্রেইন সাইলো এবং খননকৃত মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-চ্যানেল ও এর ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন।

আমাকে ৭০ বছর বয়সী শিশু বলা যেতে পারে : আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের কল সেন্টারে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হেল্পলাইন সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় অপর প্রান্ত থেকে অপারেটর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘আমি শিশু না। আমাকে অবশ্য ৭০ বছর বয়সী শিশু বলা যেতে পারে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই হেল্পলাইন উদ্বোধন করলাম।’ প্রধানমন্ত্রী অপারেটরের কাছে জানতে চান, ‘একজন ৭০ বছরের শিশু হিসেবে আমি কী সহায়তা পেতে পারি? জবাবে ১০৯৮-এর অপারেটর জানান, তথ্য সহায়তা সেবা, আইনি সেবা, কাউন্সিলিং সেবা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে শিশুকে উদ্ধারে সহায়তা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া স্কুলে কোনো সমস্যা হলেও শিশুরা বলতে পারবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অপকর্ম করবে তারা একটু ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে যে, সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে। আর এই হেল্পলাইনটি যদি কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপব্যবহার করে তাহলে তাদেরও শাস্তির ব্যবস্থা আছে। যাতে বিনা কারণে কেউ বিরক্ত করতে না পারে।  ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের শান্তি নিবাসের বাসিন্দা শিশুদের সঙ্গেও কথা বলেন, যাদের নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, শান্তি নিবাস ৫০ আসনের হলেও এই মুহূর্তে সেখানে ৬৫ জন রয়েছে। এর মধ্যে মেয়ে শিশু ৫৬ জন; আর নয়জন ছেলে শিশু। প্রধানমন্ত্রী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ১৭ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন, যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের কঠিন শাস্তি দাবি করে মেয়েটি।

খুলে গেল মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল : নৌ-চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে পুনঃখনন করা মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি উন্মুক্ত করে দেন। এ সময় তিনি নবনির্মিত ১১টি ড্রেজারেরও উদ্বোধন করেন। নৌ-রুটটি চালুর ফলে সুন্দরবনের ভিতরে শ্যাওলা নদী হয়ে যে নৌপথটি ছিল, এর থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। এখন আর সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে সুন্দরবনের ক্ষতি করে, ঘুর পথে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হবে না। মংলা-ঘষিয়াখালী এই নৌ রুটটির দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মংলা বন্দরটা সচল রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন। এটি ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। শ্যাওলা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচলে সুন্দরবন ও পরিবেশের ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্যাওলা নদী ডলফিনের একটা জায়গা। ওই নদীর পানি আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার খায়। ওই জায়গাটা বন্যপ্রাণীর একটা অভয়ারণ্য ছিল।

তিনি বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় শ্যাওলা নদী দিয়ে আমাদের জাহাজগুলো চলাচল শুরু করে। এটা সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতাকারী পরিবেশবিদদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট করছি। সেটা নিয়ে তারা কেঁদে মরেন। তিনি বলেন, ঘষিয়াখালী চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর সঙ্গে সংযুক্ত ২৩৪টি খালের মুখ বন্ধ করে চিংড়ি চাষ করা হলো। বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম নষ্ট হলো। এসব নিয়ে আমাদের পরিবেশবিদদের কখনো একটু টুঁ শব্দও করতে শুনিনি। তাদের কোনো কান্নাকাটিও শুনিনি, কোনো আন্দোলনও দেখিনি। কেউ কোনো কথাও বলেননি। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ঈমান আলী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জিল্লার রহমান এবং ইউনিসেফ প্রতিনিধি সারা বোরদাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।

সর্বশেষ খবর