শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুখ থুবড়ে পড়েছে দুই জোটের রাজনীতি

আলী রিয়াজ

মুখ থুবড়ে পড়েছে দুই জোটের রাজনীতি

হায়দার আকবর খান রনো

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন গুমোট। দুই বড় জোটের রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

সিপিবির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে টেলিফোনে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ১১তম জাতীয় সম্মেলন। চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। হায়দার আকবর খান রনো বলেন, লুটপাট অপশাসনের বিরুদ্ধে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সিপিবি সবসময় ছিল। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, লুটপাট, কর্তৃত্ববাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসে এই সম্মেলনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রনো বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা নিপাত যাক, সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সাধন করুন’- এই স্লোগানে এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিপিবির। এমন সময় এই সম্মেলন হচ্ছে, যখন দেশের দুই বড় জোটের রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। যারা ক্ষমতায় আছে তারা  গণতন্ত্রহীন অপশাসন কায়েম করেছে। উন্নয়নের কথা বলে দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশের সব মানুষ আজ অসহায়। সরকারের বাইরে আরেকটি জোট সাম্প্রদায়িক মৌলবাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করেছে। দেশের রাজনীতির কোনো পরিবর্তন হবে না যত দিন এই দুই জোটের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির উত্থান না হবে। সরকার এত উন্নয়নের কথা প্রচার করছে, কিন্তু দেশের চার কোটি মানুষ এখনো ক্ষুধার্ত থাকে। তিন বেলা খেতে পায় না। প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে না। তাহলে এত উন্নয়নের অর্থ কোথায় গেল? উন্নয়নের নামে যে লুটপাট হয়েছে তা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। তিনি বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের অর্থ প্রতিবছর বাড়ছে। লুটপাটকারীরা লুট করে দেশে বিনিয়োগও করে না। সব পাচার করে দেয়। সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি তাহলে ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কী হতে পারে? মানুষ যদি উন্নয়নের সুবিধা না পায় সেটা কখনো উন্নয়ন হতে পারে না। সরকার বলার চেষ্টা করছে, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। কিন্তু গণতন্ত্রহীনতার কারণে সারা দেশের গরিব কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ আজ ক্ষুধার্ত থাকে। সিপিবির এই নেতা বলেন, সিপিবি শ্রমিক, কৃষক গরিব মানুষের পার্টি। তাদের শ্রমে অর্থে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সম্মেলন। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটানো হবে। সম্মেলনে প্রায় ৭০০ ডেলিগেট থাকবে। চার দিনব্যাপী সম্মেলনের সব খরচ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গণচাঁদার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে মানুষকে যে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে তার পরিবর্তন করতে হবে।

রনো বলেন, দুই বড় জোট ফেল করেছে। তারা রাজনীতিকে লুটপাটের সমার্থক প্রমাণ করেছে। রাজনীতি মানে দেশের মানুষের উন্নয়ন।

গরিব খেটে-খাওয়া মানুষের উন্নয়ন। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ, বিচারহীনতা রাজনীতি নয়। সেই বিচারহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান হবে আমাদের সম্মেলনের অন্যতম প্রতিপাদ্য। সম্প্রতি একটি বড় দলের সম্মেলন হয়েছে। আমরা দেখেছি সেখানে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের উ ৎসব। বিশাল জনসমাবেশ। কিন্তু লড়াইয়ের জন্য মাঠে হাজার হাজার মানুষ হাজির করাটাই একমাত্র পন্থা নয়। সেটা দেশের সব মানুষ আজ উপলব্ধি করছে। বুর্জোয়া শক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভ করা অবশ্যই কঠিন। তবে আমরা সেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাব। তিনি বলেন, সিপিবির সম্মেলনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে নেতা নির্বাচন করা হয়, আগাম কোনো নেতা নির্বাচিত হয় না।

সর্বশেষ খবর