শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখনই প্রার্থীর খোঁজে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

এখনই প্রার্থীর খোঁজে আওয়ামী লীগ

বিএনপিসহ নিবন্ধনকৃত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এখন থেকেই মাঠ গোছানো শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। আসনভিত্তিক দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান এমপিদের আমলনামাও পর্যালোচনা করছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে জরিপ চালানোর পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। 

দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে এখন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এলাকায় জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অবস্থা, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের যোগাযোগ বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ধরন ইত্যাদি জানার চেষ্টা চলছে। জানা গেছে, প্রতিটি আসনে কমপক্ষে পাঁচজনের নাম দিয়ে তালিকা তৈরি করা হবে, যার মধ্যে বর্তমান এমপির নামও থাকবে। এ ছাড়াও নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটারদের অবস্থান, মানসিকতা, দলের প্রতি সমর্থনের হার, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ শেষে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরা হবে। কেবল নিজ দলের প্রার্থীদেরই নয়, প্রতিপক্ষ দল এবং প্রার্থীদের খবরও নেওয়া হচ্ছে। দুই বছর বাকি থাকলেও এখন থেকেই নির্বাচনী রোডম্যাপে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা দুটি এজেন্ডা হাতে নিয়েছি। এক, সাম্প্রদায়িক পরাশক্তিকে পরাজিত করা। দুই, আগামী নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্তুতি নেওয়া। সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে আমরা আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই। এদিকে ২৪ অক্টোবর গণভবনে জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলীয় নেতা-কর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এ জন্য ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করে ভোটারদের কাছে যেতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কাজগুলোর কথা জনগণকে জানাতে হবে। জনগণের জন্য মন দিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মন জয় করতে হবে। দলীয় হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনার পর তৃণমূলে নেতা-কর্মীরা এখন নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এমপিরা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন, কেউ কেউ পুরনো কোন্দল মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতেও উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শাসক দলটি মনে করছে, আগামী নির্বাচনে যদি দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করতে পারে তাহলে ভরাডুবি হতে পারে। এ চিন্তার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই বহিষ্কৃতদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।  রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনীমুখী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করছেন জনসম্পৃক্ত সরকারি কর্মসূচিগুলো। ইতিমধ্যে ১০ টাকায় চাল বিক্রি শুরু করা হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, চার লেন সড়কসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ কাজ এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পথে দেশ অনেকদূর এগিয়েছে। উদ্বোধন হয়েছে পায়রা বন্দর। রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র দৃশ্যমান উন্নয়নও সরকারকে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের নতুন কমিটির অন্যতম কাজ হচ্ছে আগামী নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দলকে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আনা। এ জন্য এখন থেকেই দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনায় তৃণমূলকে শক্তিশালী ও বেগবান করতে সাংগঠনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। তৃণমূলে এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, মানুষের মন জয় করতে এখন থেকেই মানুষের কাছে যেতে হবে। এ জন্য দলের অভ্যন্তরে যদি ভুল বোঝাবুঝি বা কোন্দল থাকে এগুলো এখন থেকেই মিটিয়ে ফেলতে হবে। আগামীতে দলকে ক্ষমতায় আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব মহলেও জনপ্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নেত্রীর নেতৃত্বে ২০১৯ সালে দলকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে আমরা সাংগঠনিক কাজ শুরু করব। ইতিমধ্যে জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভানেত্রী নির্বাচনী মাঠ গোছাতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরাও সরকারের অর্জন ও উন্নয়ন তুলে ধরতে জনগণের কাছে যাব। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের জন্য এখনো আমাদের হাতে দুই বছর সময় আছে। বিগত সাত বছরের উন্নয়ন ও অর্জনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাংগঠনিক কার্যক্রম নির্ধারণ করব।   নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আসনভিত্তিক এমপিদের আমলনামা দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে। তিনি প্রত্যেকটি খতিয়ে দেখছেন। এখন থেকেই বিকল্প একাধিক প্রার্থীর বিষয়টি চূড়ান্ত করছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর