রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মেজর জিয়ার গোপন বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেজর জিয়ার গোপন বৈঠক

সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত মেজর জিয়াউল হকের নির্দেশনায়ই ব্লগার নাজিম উদ্দীন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় জঙ্গিরা। রাজধানীর দক্ষিণখান, বাড্ডা এবং মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন আস্তানায় মেজর জিয়া গিয়ে জঙ্গিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতেন। সম্প্রতি ব্লগার নাজিম উদ্দীন সামাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে এমনই তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গত ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের আদালতে গ্রেফতার রশিদুন নবীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রশিদুন নবী অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করেছেন বলে দাবি করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ২৫ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেছেন দক্ষিণখান, মোহাম্মদপুর, বাড্ডার বিভিন্ন আস্তানায় মেজর জিয়ার সঙ্গে এবিটির সদস্যদের মাঝে মাঝেই দেখা হতো।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি মেহেদী হাসান অমি ওরফে ওসামা ওরফে আবদুল্লাহ এবং রশিদুন ব্লগার নাজিম উদ্দীন সামাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ছিলেন সাইফুল ইসলাম। তিনিও এবিটির সদস্য। গতকাল মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব বিষয় নিশ্চিত করেন। দক্ষিণখানের আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল মেজর জিয়ার। সেখানে রাতযাপনও করতেন তিনি। দিতেন হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ। গ্রেফতারকৃতরা বলছেন, মেজর জিয়া অল্প সময়ের মধ্যে তার সম্মোহনী শক্তি দিয়ে যে কাউকেই প্রভাবিত করতে পারতেন।

সূত্র বলছে, নাজিম উদ্দীন হত্যাকাণ্ডের তিন মাস আগে সিলেটে হত্যাকাণ্ডের বিশদ পরিকল্পনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও নেপথ্যে থেকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন মেজর জিয়া। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত আসে জুলহাস মান্নানকে হত্যার। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ৬ এপ্রিল নাজিম হত্যার তিন দিন আগ থেকে টানা রেকি করে জঙ্গিরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে নির্মাণাধীন তিনতলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে তারা। জঙ্গিরা সামাদের যাতায়াতের ওপর নজর রাখছিল। কারণ নাজিম যে মেসে থাকত সেখানে গিয়ে হত্যা করা কঠিন ছিল। এ কারণে জঙ্গিরা নাজিমকে যাতায়াতের পথে সুযোগমতো কোনো জায়গায় হত্যার পরিকল্পনা করে। সুযোগ পেয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রাতে হামলা চালিয়ে নাজিমকে হত্যা করে পাঁচ জঙ্গি। একই কৌশল ছিল ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাস-তনয় হত্যাকাণ্ডেও। ২০১৪ সালে সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি শেষ করেন নাজিম। অনলাইনে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন তিনি। সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ছিলেন। হেফাজতের আন্দোলনের সময় ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ যে কথিত তালিকা কয়েকটি গণমাধ্যমে এসেছিল, তাতে তার নামও ছিল। নাজিম উদ্দীন হত্যা মামলাটি তদন্ত করেন সিআইডির পরিদর্শক শাহজানান। তখনই মামলার তদন্তে এবিটির সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। গ্রেফতার করা হয় জঙ্গি অমিকে। পরে মামলার তদন্তে আসে সিআইডির এএসপি এহসানের কাছে। এ সময় আদালতের নির্দেশে জঙ্গি অমিকে দুদফায় রিমান্ডেও আনা হয়। সর্বশেষ মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিটকে। ডিএমপির সিটি ইউনিটের ডিসি মহিবুল ইসলাম বলেন, নাজিম উদ্দিন হত্যার অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। জানা গেছে, অমি হিযবুত তাহ্রীর যোগদান করে। ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলাও হয়। পরে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) হয়ে এবিটিতে যোগ দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর