রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রোমাঞ্চের অপেক্ষা

মেজবাহ্-উল-হক

রোমাঞ্চের অপেক্ষা

৬ উইকেট নিয়ে মেহেদীর উচ্ছ্বাস —রোহেত রাজীব

টেস্ট ক্রিকেটে কখনো কখনো এমন সব ভুতুরে কাণ্ড ঘটে, ক্রিকেটাররা এমন সব ঘটনার জন্ম দেন যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। যেমন মাহমুদুল্লাহর আউটটি। জানাই ছিল, সেটি দিনের শেষ বল। তারপরেও দলের সবচেয়ে ক্লাসিক ব্যাটসম্যান অন্তিম মুহূর্তে কেন যে এমন এক শট খেলতে গেলেন? মাহমুদুল্লাহর আউটের পরও এই টেস্টের লাগাম কিন্তু বাংলাদেশের হাতেই। ১২৮ রানের লিড। হাতে রয়েছে ৭ উইকেট। যদিও প্রথম ইনিংসে শেষ ৪৯ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর আস্থা রাখা কঠিন। কেননা সকালের সেশনে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। এই টেস্টের ভাগ্যও নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে আজকের প্রথম সেশনেই। তবে গতকালের দিনের শুরুটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের কাছে। তিন উইকেটে ৫০ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। স্পিনারদের তোপের মুখে পড়ে ১৪৪ রানেই তাদের আট উইকেট নেই। সকালেই দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম ইংল্যান্ডকে ব্যাটফুটে পাঠিয়ে দেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল, প্রথম ইনিংসেই লিড নিতে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু টেস্টে যাদের ১৪০ বছরের অভিজ্ঞতা সেই ইংলিশরা কি আর সহজে হাল ছাড়ার পাত্র! নবম উইকেটে ঠিকই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দুই বোলার ক্রিস ওয়াকস ও আদিল রশিদ মিলে গড়ে ৯৯ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি। অবশ্য ওয়াকস ও রশিদকে শুধু বোলার বললে তাদের প্রতি অবিচারই করা হয়। কেননা তারা ৯ ও ১০ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামলেও দুই জনেরই প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ। ওয়াকসের ৯টি সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ১৯ হাফ সেঞ্চুরি। আর আদিল রশিদের ১০টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩৫ হাফ সেঞ্চুরি। দুই ইংলিশ ক্রিকেটার বেশ ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। এক সময় মনে হচ্ছিল, তাদেরকে আউট করা বুঝি অসম্ভব! কিন্তু হাতে নতুন বল পেয়েই যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন মিরাজ ও তাইজুল। ওয়াকসকে আউট করে মিরাজ জুটি ভাঙলেন, আর শেষ উইকেট হিসেবে ফিনকে সাজঘরে পাঠিয়ে দিলেন তাইজুল। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসের মতো গতকালও প্রথম ইনিংসেই ৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেললেন মিরাজ। টেস্টের ইতিহাসে এর আগে কোনো অফস্পিনার ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টের দুই ইনিংসে ছয়টি করে উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। তাইজুল নিয়েছেন তিন উইকেট। দুই স্পিনারের দাপটের পরও ২৪ রানের লিড নেয় ইংল্যান্ড।

প্রথম দিনের শেষ ঘণ্টাটা বৃষ্টির কারণে পণ্ড হয়ে যাওয়ায় গতকাল আধা ঘণ্টা আগেই শুরু করা হয়েছিল। একদিনেই খেলা হলো ১০০ ওভার। ক্রিকেটারদের ক্লান্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক! কিন্তু শেষ বিকালে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হলো তারা নতুনভাবে উজ্জীবিত। উইকেট পড়ছে না, ওভার প্রতি প্রায় ৫ করে রান আসছে। যে উইকেটে একটু আগেই ধুকছিল ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা সেখানেই বাংলাদেশের ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিং দেখে অকল্পনীয়ই মনে হচ্ছিল। স্পিন স্বর্গে দ্বিতীয় ইনিংসে দুই উইকেটে ১৫২ রান অতিমানবীয় ঘটনাই বটে! দিনের শেষ ওভার, শেষ বল-  তখনো গ্যালারি থেকে দর্শকরা নড়ছেন না। সব কিছুই মনে হচ্ছিল স্বপ্নিল। কিন্তু শেষ বলে ঘটে গেল মায়াবি ভ্রম- নিজের মহামূল্যবান উইকেটটা ছুড়ে দিয়ে মাহমুদুল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন সবই বাস্তবতা!  টেস্টের আবহ থেকে এখনো আমরা যোজন যোজন দূরে! তবে বিনোদনে ভরপুর ছিল তামিমের ৪০ রানের ইনিংসটা। আউটের দৃশ্যটি বাদ দিলে মাহমুদুল্লাহর ৪৭ রানের ইনিংসটাও ছিল প্রশংসনীয়। ইমরুল কায়েস যে নির্ভরতার প্রতীক তা যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ৫৯ রানে এখনো অপরাজিত রয়েছেন। দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর তিন উইকেটে ১৫২। দিনের বেশির ভাগ সময়ই ছিল বাংলাদেশের আধিপত্য। হতাশা কেবল শেষ বলে মাহমুদুল্লাহর উইকেট পতন নিয়ে। তারপরেও বাংলাদেশের লিড এখন ১২৮ রান। বড় রানে লিড নিতে পারলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আবারও স্বপ্ন দেখাচ্ছে টাইগাররা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর