সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুই প্রার্থীর দুই সংকট

হিলারির ই-মেইল, ট্রাম্প নারী কেলেঙ্কারিতে

প্রতিদিন ডেস্ক

দুই প্রার্থীর দুই সংকট

মার্কিন নির্বাচনের সাকল্যে এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এখন আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারের বিষয়ে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর নতুন করে তদন্ত শুরুর ঘোষণা। বিষয়টিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না হিলারি শিবির। তারা এফবিআই-প্রধান জেমস বি কমির এ সিদ্ধান্তকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে হিলারিকে হারানোর কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন। তবে হিলারি দমবার পাত্র নন। কমির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি কমিকে ‘ডিপলি ট্রাবলিং’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে হিলারি তার ইমেইল তদন্ত নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্লোরিডার ডেটোনা বিচে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে আলাপকালে হিলারি বলেন, ‘আপনাদের কেউ কেউ হয়তো শুনে থাকবেন এফবিআই পরিচালক শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, এ সংস্থাটি আবার ইমেইল পর্যালোচনা করছে। নির্বাচনের ঠিক পূর্বমুহূর্তে এ রকম সামান্য তথ্য প্রচার করা এক আজব ব্যাপার। এটা এক অদ্ভুত ব্যাপারই নয়, অপ্রত্যাশিতও বটে। এটা গভীর বিরক্তিকর। কারণ, ভোটাররা পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ সত্যটি জানতে চান।’ এ সময় তিনি জেমস কমিকে এ বিষয়ে পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করার আহ্বান জানান। হিলারির সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন অনুসারী ডেমোক্রেটরা। তারাও জেমস কমির ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তাদেরও দাবি বিতর্কিত নতুন এই ইমেইলের বিস্তারিত প্রকাশ করার। এ বিষয়ে জেমস কমি ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল লোরেটা লিঞ্চের কাছে আজকের মধ্যেই বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি লেখার কথা চারজন সিনেটরের। তারা হলেন ডেমোক্রেট দলের সবচেয়ে বেশি সময় সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্যাট্রিক লেহি, ডায়ানে ফেনস্টেইন, টমাস কারপার ও বেনজামিন কার্ডিন। এখানেই শেষ নয়। ওহাইওর কলাম্বাসে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে কংগ্রেসনাল ব্লাক ককাস। এতে রয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যও। তারাও এফবিআই পরিচালক জেমস কমির কাছে ইমেইল ইস্যুতে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছেন। তবে এফবিআইর পরিচালক বলছেন, নতুন এই ইমেইলের বিষয়ে জানানোটা তিনি নৈতিকতা বোধ থেকে করছেন। তিনি আরও বলেন, মার্কিনিদের মধ্যে কোনো বিভেদ তিনি করতে চান না। এদিকে এফবিআইর ওই ঘোষণার পর হিরারির বিরুদ্ধে আক্রমণের নতুন রসদ পেয়ে গেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলছেন, হিলারি রাষ্ট্রীয় পদে থেকে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন। তাকে কোনোভাবেই নির্বাচিত করা যায় না। এজন্য সবাই যেন তাকে (ট্রাম্প) ভোট দেন। ট্রাম্প বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির পরই হিলারির ইমেইলের বিষয়টি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি। ২০১৫ সালে প্রথম হিলারির বিরুদ্ধে অভিযোগটি উঠলেও তদন্তের পর গুরুতর কিছু পাওয়া যায়নি বলে এফবিআই জানিয়েছিল। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না আনার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।

জাল ভোটের অভিযোগে ট্রাম্প সমর্থক গ্রেফতার : মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পই প্রথম প্রার্থী যিনি দাবি করেছিলেন ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হবে। আর এটা করবেন হিলারির সমর্থকরা। কিন্তু শেষমেশ জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে একজন গ্রেফতার হয়েছেন আর তিনি ট্রাম্পেরই সমর্থক। আইওয়া অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোটে জালিয়াতি করতে গিয়ে ধরা পড়া ওই ট্রাম্প সমর্থকের নাম টেরি রোট (৫৫)। তিনি একজন নারী। টেরি রোট ট্রাম্পকে দুবার ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আইওয়ার রাজধানী দেস মইনেসের দুটি পৃথক ভোট কেন্দ্রে তিনি এই প্রচেষ্টা চালান। ওই দিন টেরি রোট প্রথম ভোট দেন পল্ক কাউন্টির নির্বাচনী কার্যালয়ে। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি কাউন্টির অন্য একটি ভোট কেন্দ্রে যান এবং আবার ট্রাম্পকে ভোট দেন। বাড়ি সংস্কার নিয়েও ঝামেলায় হিলারি : হিলারি ক্লিনটন শহর কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি না নিয়েই তার বাড়ি মেরামত ও পুনর্বিন্যাসের কাজ করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শহর কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছে। অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সংস্কারকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত গ্রীষ্মে নিউইয়র্কের বিলাসবহুল এলাকা উয়েস্টচেস্টারের চাপাকুয়ায় ১৬ লাখ ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন ক্লিনটন দম্পতি। অক্টোবরের প্রথম দিকে ওই বাড়ির গাছ কাটার বিষয়টি নজরে এলে এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, সমস্যা আরও গভীরে। ভবন পরিদর্শক দেখতে পান, অনুমতি না নিয়ে বাড়িটি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। রান্নাঘরকে করা হয়েছে আধুনিকায়ন। নতুন করে হিটিং ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। বাড়ির কাঠামো পরিবর্তন করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে একটি সুইমিংপুলও। গত আগস্টে শুরু হওয়া এসব কাজের জন্য শহর কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে পরিদর্শনে বেরিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি শহরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বাড়ির মালিক ইচ্ছা করলেই নকশা পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পুনর্বিন্যাস করতে পারেন না। এজন্য যথাযথভাবে আবেদন করতে হয়। অনুমতি ছাড়া এ ধরনের কাজ করা হলে বাড়ির মালিককে বড় মাপের জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়। এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর