মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেই শিশুটির স্বাভাবিক জীবন নিয়ে শঙ্কা

দুই দিনে নির্যাতিত আরও তিন শিশু ওসিসিতে ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার পাঁচ বছরের শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে, ধর্ষণের শিকার হয়ে দুদিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) আরও তিন শিশু ভর্তি হয়েছে। আর দিনাজপুরের শিশুটির জন্য উন্নত নার্সিং, পুষ্টিকর খাবার ও সমাজের সবার সহানুভূতি খুবই অপরিহার্য বলে মনে করছেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। তারা আজ সকালে পূর্ণাঙ্গ বোর্ডের সভায় তার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবেন। তারা জানিয়েছেন, শিশুটির স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে তার ফ্লাশব্যাক মেমোরি। এমনকি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভয় তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হতে পারে।

গতকাল ঢামেক হাসপাতালের

ওসিসির চিকিৎসক ডা. বিলকিস বেগম জানান, শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে। তার শরীরে বেশ কয়েকটি ক্ষত রয়েছে। যা আমরা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। শিশুটি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেন ভবিষ্যতে তার কোনো সমস্যা না হয়। কাল (মঙ্গলবার) পূর্ণাঙ্গ বোর্ড বসে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরই মধ্যে শিশুটির সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বোর্ডে আলোচনা করে তার সার্জারি এবং অপারেশনের দিন ঠিক করা হবে। এদিকে, শনিবার রাতে রাজধানীর ভাটারায় ধর্ষণের শিকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ঢামেক হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। গতকাল মেয়েটির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তবে তার শরীরে মারধর ও নিপীড়নের আলামত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল আমিন খন্দকারের ছোট ভাই রাশেদুল, শাহিন ও নাজমুলকে আসামি করে মামলা করেছেন শিশুটির বাবা। ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল মুত্তাকিন বলেন, আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। শিশুটির বাবা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নুরেরচালা এলাকা থেকে শাহিন নামে এক প্রতিবেশী তার মেয়েকে ডেকে ছমির উদ্দীন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল রাশেদুল ও তার আরেক সহযোগী নাজমুল। সেখানে রাশেদুল তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি সে সবাইকে বলে দেবে বললে শাহীন ও নাজমুল তাকে বেধড়ক মারধর করে। পরে তারা তার মেয়েকে বাসার সামনে ফেলে যায়। রবিবার শাহজাহানপুরের শান্তিবাগে সাত বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় তার বাসার পাশে পড়ে থাকে। ঐদিন রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেন তার মা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির রক্তক্ষরণ হওয়াতে সে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কাল (মঙ্গলবার) ফরেনসিক করা হবে। শিশুটির মা জানান, তার মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কয়েকটি বাসা পরই সে প্রাইভেট পড়তে যেত। ঘটনার দিন বিকালে সে পড়তে যায়। দেরিতে বাসায় ফেরার কারণ জানতে চাইলে মেয়ে জানায়, অপরিচিত এক ব্যক্তি তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় ধর্ষণ মামলা হলেও ধর্ষক ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, মেয়েটি ছাড়া কেউ ধর্ষককে এবং তার বাসার তথ্য জানে না। মেয়েটি সুস্থ হলেই ধর্ষককে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করব। রবিবার রাজধানীর হাজারীবাগে আড়াই বছরের আরেক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষক সোহেল (২০) পলাতক রয়েছে। সন্ধ্যায় ঢামেকে ভর্তির পর গতকাল শিশুটির ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মাঈনুল ইসলাম জানান, আমরা বিষয়টি স্বপ্রণোদিত হয়ে দেখছি। ওই ছেলেকে ধরার জন্য অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর