বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অর্থ আত্মসাৎ ও জনবল নিয়োগে অনিয়ম

ওয়াসার এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওয়াসার এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদে দুদক

তাকসিম এ খান

অর্থ আত্মসাৎ ও জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. তাকসিম এ খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের দুই উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ ও জাহেদ হোসেন খান টানা চার ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পে দুর্নীতি এবং একই ইউনিয়নের ৩৩৬ জনকে ওয়াসার চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ড. তাকসিম এ খান কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি বলেও জানা গেছে। দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা জশলদিয়া ঢাকা ওয়াসার চলমান একটি প্রকল্প। তাকসিমের বিরুদ্ধে ওয়াসার এ প্রকল্পে সরকারের কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধনের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের কাছে আসা অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, ঢাকা ওয়াসার বর্তমান এমডির হস্তক্ষেপে বিনা টেন্ডারে ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং পরামর্শক নিয়োগের আগেই তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের পাইপ আমদানি করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের ১৩ মাস আগেই ঢাকা ওয়াসা ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করে। কাজের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়নি। ভেটিং (দরকষাকষি) হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। প্রকল্পটির কাজ চলমান থেকে শেষ হলে সরকারের কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ভেটিংয়ের সুযোগ থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তা না করায় কমপক্ষে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের আগেই বিদেশ থেকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী (পাইপ) আমদানির জন্য ব্যয় হয়ে যাওয়া টাকার ওপর অতিরিক্ত সুদ গুনতে হবে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের বড় অঙ্কের টাকার ক্ষতির পাশাপাশি কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পের এক কর্মকর্তা এর আগে বলেছিলেন, কোনো রকম নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের পাইপ আমদানি করা হয়েছে। এতে সরকারের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করে নতুনভাবে শুরু না করলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এসব অভিযোগের বিষয়ে তাকসিম এ খান যেসব উত্তর দিয়েছেন, এতে তিনি কোনো ধরনের দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসায় একই সময়ে একই ইউনিয়নের ৩৩৬ জন চাকরি পাওয়ার নথি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের ৩৩৬ জন বাসিন্দাকে তিনি অবৈধ উপায়ে নিয়োগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অভিযোগ রয়েছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদের ওই নিয়োগে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওই বছরের ১৬ অক্টোবর ও পরবর্তী সময়ে দুবার ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বরাবর নিয়োগ-সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করে চিঠি দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওয়াসায় একই উপজেলায় ৩৩৬ জনের নিয়োগ নিয়ে অনুসন্ধান হয়। সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ আমলের শেষ সময়ে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের ৩৩৬ বাসিন্দা ঢাকা ওয়াসায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকরি পান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। ওই সময় প্রায় এক হাজার লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিয়োগ বৈধ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় যারা টাকা দিয়েছেন, তারাই চাকরি পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিচার করা হয়নি। দুদক সূত্র জানায়, ২০০১ সালের শেষের দিকে ১২০০ লোকের কাছ থেকে মাথাপিছু দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে নিয়ে ওই নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনায় অন্তত আট কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য হয়। ওই সময় নিয়োগ পাওয়া এক হাজার কর্মচারীর মধ্যে ৩৩৬ জনই গাছুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে দুদকের অভিযোগের তীর ওয়াসার তৎকালীন উপপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও উপসচিব (প্রশাসন) গোলাম মাওলার দিকে। এ কর্মকর্তার বাড়ি মুলাদীর গাছুয়া ইউনিয়নের বাণীমর্দন গ্রামে। ওই সময় হাবিবুল গাফ্ফার নামে আরেকজন উপসচিব ছিলেন ওয়াসায়। তার বাড়িও মুলাদীতে। ওই কর্মকর্তারা এবং ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (রেজি. ২৫২২) বড় নেতাদের যোগসাজশে এ ধরনের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগে বলা হয়। দুদক সূত্র জানায়, ২০০০ সালের শেষ দিকে প্রথম দফায় ৩০০ জনের নিয়োগ সম্পন্ন হয়। পরে ২০০১ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে আরও ৭০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের সবার নিয়োগের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০১। নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের পদবি ছিল উচ্চমান সহকারী, নিম্নমান সহকারী, পিয়ন ও সহকারী পাম্প অপারেটর।

সর্বশেষ খবর