বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইসলামে মানুষ হত্যার অধিকার দেওয়া নেই

প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রপন্থা থেকে দেশের যুব সমাজকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের যুবকরা বিপথে চলে যাক, আর বাবা-মায়ের জন্য দুঃখের কারণ ঘটুক—এ আমরা চাই না। এসব কাউকে বেহেশতে নিয়ে যাবে না, হুর-পরীও দেবে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে মানুষ খুন করার কোনো অধিকার দেওয়া নেই। প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১৯ জন যুব উদ্যোক্তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এবারই প্রথমবারের মতো অটিজম কোটায় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, যুব সমাজকে বলব মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ—এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে নিজের যে মেধাটা আছে, যে কর্মশক্তি আছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে নিজের জীবনকে, নিজের পরিবারকে যেমন উন্নত করা যাবে, দেশটাও উন্নত হবে। আমাদের যুব সমাজকে একটু সুযোগ করে দেওয়া গেলে তারা সফল হতে পারে। আন্দোলন-সংগ্রামেও বহু যুবক জীবন দিয়ে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। যুব সমাজের মননে যে সৃষ্টিশীলতা আছে তা বিকাশের সুযোগ করে দিতে পারলে আমরা উন্নত-আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে পারব। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের সভাপতিত্বে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার উদ্দিন, যুব ও ক্রীড়া অধিদফতরের মহাপরিচালক আনোয়ারুল করিম, যুব সংগঠক অমীয় প্লাবন চক্রবর্তী, সেলফ এমপ্লয়ার সুলতানা পপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যুবক যা পৃথিবীর অনেক দেশেরই নেই। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পূর্ণ সদ্ব্যবহারকল্পে সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্তকরণের বিকল্প নেই। যুব সমাজই দেশের প্রাণ এবং উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার চালিকা শক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুবকদের সংগঠিত করে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিলেন, উদ্যমী করেছিলেন। এই যুবকরাই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। এখন সবাইকে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবিত হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কারও কাছে হাত পাতব না, আত্মমর্যাদাশীল, কর্মউদ্যমী হয়ে উঠব। আমরা চাই না আমাদের যুবশক্তি কোনোভাবেই বিপথে যাক এবং তাদের অভিভাবকদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াক। তাদেরকে অবশ্যই মাদক, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো কোনো সুস্থ ধারা নয়, এগুলো সবসময়ই যুব সমাজের সুন্দরভাবে বিকাশের অন্তরায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রশিক্ষণ পেয়ে যুবকেরা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। সরকার যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে বেকার যুবকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণ সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে তাদের মানবসম্পদে পরিণত করছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯ আগস্ট ১৯৭২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে যুবকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, কাজ কর, কঠোর পরিশ্রম কর, নইলে বাঁচতে পারবে না। শুধু শুধু বিএ, এমএ পাস করে লাভ নাই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও স্কুল, যাতে সত্যিকার মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটায় ২০০৯ সালে সারা দেশে পলিটেকনিকে ভর্তির আসন যেখানে ছিল মাত্র ২৫ হাজার বর্তমানে তা ১ লাখ ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদফতর প্রতিষ্ঠার পর থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬২ জনকে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৯ জনকে ১ হাজার ৪৫৯ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে ২০ লাখ ২১ হাজার ১০৩ জন আত্মকর্মে নিয়োজিত হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবদের অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যে কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত একজন যুবক-যুবনারী প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা কর্মভাতা পেয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত ২৮টি জেলার ৬৪টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ সমাপনকারীর সংখ্যা মোট ১ লাখ ১১ হাজার ১১৬ জন। কর্মসংস্থান প্রাপ্তদের সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮২ জন। অস্থায়ী কর্মসংস্থান শেষে অনেকে স্থায়ী কর্মসংস্থান কিংবা আত্মকর্মী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিসে যুবনারীদের অংশগ্রহণ শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। তাদের এই বিপুল অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। নীতিমালা অনুযায়ী ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ক্রমান্বয়ে সারা দেশে সম্প্রসারিত হবে।

 তিনি বলেন, সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কর্তব্য পালন করলে আমরা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।

সর্বশেষ খবর