বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এমপি বদির তিন বছর জেল

আদালত প্রতিবেদক

এমপি বদির তিন বছর জেল

সাজা ঘোষণার পর গতকাল কারাগারে নেওয়া হয় আবদুর রহমান বদিকে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দুর্নীতির দায়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। গতকাল ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামি বদি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আবদুর রহমান বদি কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানান, অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ থেকে আদালত এমপি বদিকে খালাস দিয়েছে। কিন্তু সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। তবে আসামি বদির আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা রায়ের পর জানান, এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। ১৯ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। এ মামলায় মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। গতকাল রায় ঘোষণার আগে জামিনে থাকা আসামি আবদুর রহমান বদি সকাল ১০টার পর আদালতের এজলাস কক্ষে হাজির হন। এদিকে রায় ঘোষণার পর কারাগারের উদ্দেশে আদালত কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় বদি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি নির্দোষ। সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো সম্পদও অর্জন করিনি। আমার বিরুদ্ধে সাক্ষীরা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।’ পরে হাসিমুখেই বদিকে হেঁটে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে উঠতে দেখা যায়। এ সময় বদির মুখে কোনো মলিনতা ছিল না। পরনে ছিল পরিপাটি পোশাক। রায়ে বলা হয়েছে, আসামি আবদুর রহমান বদি ২০১৩-২০১৪ করবছরে তার দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৫ টাকার নিট সম্পদ প্রদর্শন করেন। কিন্তু ২০১৪ সালের ২০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের সর্বমোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২ টাকা। এ ক্ষেত্রে আসামি বদি ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। এ ছাড়া আবদুর রহমান বদি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেছেন ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯২ হাজার ৭২৩ টাকা। এ ক্ষেত্রেও বদি ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৪ টাকার সম্পদ গোপন করে মিথ্যা তথ্য সংবলিত সম্পদবিবরণী দাখিল করেছেন। আসামি বদি ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে মিথ্যা তথ্য-সংবলিত সম্পদ বিবরণী দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারার অপরাধ সংঘটন করেছেন। মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মো. আবদুস সোবহান ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, এমপি বদি আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বৈধতা দেখাতে কম মূল্যে সম্পদ কিনে বেশি মূল্যে বিক্রির মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এর আগে দুদকের এ মামলায় ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে তিন সপ্তাহ কারাগারে ছিলেন আবদুর রহমান বদি। পরে তিনি হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর