বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঢাকা মেডিকেলে তরুণীকে ধর্ষণ করল ছয় আনসার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আটক রেখে মানসিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে জড়িত ছয় আনসার সদস্যকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই কিশোরীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়।

ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২৭ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে বহির্বিভাগের নিচ তলায় একটি ফাঁকা রুমে নিয়ে ওই কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আনসার সদস্যরা। তার এক দিন পর ২৯ অক্টোবর তাকে গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন ‘কামাল’ নামে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। পরে চিকিৎসকরা ধর্ষণের আলামত পাওয়ায় সেখান থেকে ওসিসিতে স্থানান্তর করেন। ওসিসির চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসাবাদে আনসারদের সম্পৃক্ততার কথা জানায় ওই কিশোরী। ওসিসির চিকিৎসক ডা. বিলকিস বেগম জানান, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মানসিক সমস্যা রয়েছে। তার ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে মানসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। তার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তির যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আলামত পাওয়া গেছে। মেয়েটির অভিভাবককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে তাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ঘটনার খবর পেয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসা ওই কিশোরীর ভাই জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে তিনি এখানে এসে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। তার বোন পড়াশোনায় ভালো ছিল। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তিও পায়। কিন্তু নবম শ্রেণির পর তার আর পড়াশোনা হয়নি। বাবার মৃত্যুর পর তার বোনের কিছুটা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। কখনো ভালো আবার কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে সে পাঁচ-ছয় দিন আগে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হয়েছিল। আরও জানা গেছে, ঘটনার তিন দিন পর সোমবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আনসার-ভিডিপি সদর দফতর। গতকাল তাদের বহিষ্কারের আদেশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন আনসারের এপিসি একরামুল, আনসার সদস্য আমিনুল, আতিকুল, মীর সিরাজ, মিনহাজ ও বাবুল। আনসার-ভিডিপির পরিচালক (নিয়ন্ত্রণ) হীরা পারভেজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা আমাদের প্রাথমিক তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু বহিষ্কারই নয়, আজীবন বহিষ্কার এবং তাদের আইডি সিল করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সদর দফতর থেকে, যেন ভবিষ্যতে কোনোভাবেই তারা এ বাহিনীতে প্রবেশ করতে না পারেন। আর গণধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী যদি কোনো মামলা করে তাতে পুলিশকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’ অভিযোগে জানা গেছে, ঘটনার পরই অভিযুক্ত এপিসি একরামুলকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে আগারগাঁও পরিবেশ অধিদফতরে বদলি করা হয়েছিল। আর অন্যদের প্রত্যাহার করে ঢাকা জেলা অফিসে যুক্ত করা হয়। তবে অভিযোগ ওঠার প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও এ ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলছি। তবে এখনো কোনো মামলা হয়নি।’ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর বলেন, ‘আনসারদের বিষয়ে যা জেনেছি তার বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। ব্যবস্থা নেবে তাদের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট। এতে আমাদের কিছু করার নেই।’

সর্বশেষ খবর