বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব

দায় এড়াতে ব্যস্ত দায়িত্বশীল মহল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো? সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই কি পরিকল্পিতভাবে সেদিন তাণ্ডব চালানো হয়েছিল? সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরাই-বা কেন নীরব ছিলেন? নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার পর নানা প্রশ্ন এখন ওয়াকেবহাল মহলগুলোতে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। তাতে দেখা যাচ্ছে দায়িত্বশীল অনেকেই দায় এড়াতে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন।

এদিকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দ্রুত বিচারের স্বার্থে এ ঘটনায় সুপ্রিমকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারবিভাগীয় তদন্ত  কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে। নাসিরনগরের স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী মহল পুরো পরিকল্পিতভাবে ওই দিনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর পেছনে যেমন সরকারকে বেকায়দায় ফেলে স্বার্থ হাসিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের চক্রান্ত কাজ করেছে, তেমনি যে কোনো প্রক্রিয়ায় ইস্যু তৈরির বিষয়টিও স্পষ্ট। ধর্মীয় অনুভূতিকে হাতিয়ার করে পরাজিত শক্তি যেমন এ ঘটনার নেপথ্যে কাজ করেছে, তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বপালনে শিথিলতাও সেদিনের ঘটনার জন্য দায়ী। চিহ্নিত মহলকে সমাবেশ করতে দেওয়াও একটি বড় শৈথিল্যতা। যদিও জেলার পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কেন অশান্তিপূর্ণ হলো—তা নিয়ে কর্মকর্তারা হকচকিত হয়ে পড়েন। পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘পবিত্র কাবা শরিফের ওপর শিবমূর্তি স্থাপনের ঘটনাটি নজরে আসে ২৮ অক্টোবর সকাল ৯টায়। উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাসের (৩০) ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করানো হয়। মুহূর্তের মধ্যে রহস্যজনকভাবে ছবিতে লাইক ও শেয়ার দেয় বেশকিছু লোক। দ্রুত খবরটি প্রচার করে সবখানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন স্থানীয়রা রসরাজকে আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। রাতেই ঘোষণা দেওয়া হয় রবিবার বিক্ষোভ-মিছিল হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মামলা ও আসামি ধরা পড়ায় প্রতিবাদ করার কিছু নেই। তারপরও গ্রামে গ্রামে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন বিক্ষোভের সমর্থনে উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে মাইকিং করা হয়। কাবা শরিফ অবমাননার প্রতিবাদে মসজিদের মাইক থেকে মাইকিং করা হয়।’ পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ‘মূলত পবিত্র কাবা শরিফকে নিয়ে ব্যঙ্গ করায় প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমন ম্যাসেজ আমরা পাই। প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুলিশের পক্ষ থেকে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজ মোড় ও আশুতোষ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকালে সেখানে এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে লোকসমাগম। পরে আরও এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ডাকা হয় র‌্যাব, বিজিবি এবং অতিরিক্ত পুলিশ। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা, আহলে সুন্নত, জামায়াত নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্তাসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন সেই সমাবেশে। দুপুর প্রায় ১২টায় খবর আসে বেশকিছু যুবক হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসাবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’

সর্বশেষ খবর