শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হিসাব নিকাশে নাটকীয় মোড়

ফরিদা ইয়াসমিন, নিউইয়র্ক থেকে

হিসাব নিকাশে নাটকীয় মোড়

নাটকীয় মোড় নিচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ। যারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, হিলারি ক্লিনটনই হতে যাচ্ছেন আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তারাও নড়েচড়ে বসেছেন। পাল্টে যেতে বসেছে সব হিসাব-নিকাশ। এফবিআই হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল পুনরায় তদন্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পরই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। যারা হিলারিকে ভোট দেবেন বলে কিছুটা মনস্থির করেছিলেন তারাও নড়েচড়ে বসেন। এমনিতেই আগে থেকে হিলারির ক্লিন ইমেজ না থাকলেও মন্দের ভালো হিসেবে তাকে বেছে নিয়েছিলেন অনেকে। এদিকে মতামত জরিপেও ক্রমশ এগিয়ে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হিলারি এর আগে ১৪% এগিয়ে থাকলেও ১ নভেম্বর তা নেমে এসেছে ১%-এ। এখন হিলারি-ট্রাম্প সমর্থক প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে। তাই ভোটযুদ্ধে কে জয়ী হতে যাচ্ছেন, তা বলা মুশকিল। এখন সবার মনেই ঘুরেফিরে একটা কথাই আসছে কে জিতবেন— হিলারি না ট্রাম্প? নতুন করে হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি সামনে আসায় ভোটাররা যেমন নতুন করে ভাবছেন তেমন অনেকে ভোটদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। শিশুদের নিয়ে কাজ করেন মিজ সারা। কাকে ভোট দেবেন— জানতে চাইলে সারার জবাব, ‘আমি ভোট দিতেই যাব না।’ তার মতে একজন স্টুপিড আরেকজন দুর্নীতিবাজ। কেউই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। পেশায় দন্ত চিকিৎসক বাংলাদেশি-আমেরিকান মনোরমা বিশ্বাস মনে করেন, হিলারিই যোগ্য। তার মতে নারীর প্রতি সম্মান নেই, কথাবার্তায় অসংলগ্ন ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি হিলারিকেই ভোট দেবেন। তবে মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ট্রাম্প ইসলামবিদ্বেষীদের তার পক্ষে টানতে সমর্থ হয়েছেন। প্রথম থেকেই ট্রাম্প ইসলামবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় মুসলমানরা তার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল ইকোনমি বিভাগের অধ্যাপক শেরিন হেলোরান নিউইয়র্কে ফরেন প্রেস সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এবারই প্রথম মুসলিম ভোটাররা ব্লক ভোট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী বক্তব্যের পর মুসলমান ভোটাররা সংগঠিত হতে শুরু করেন। ইউএস কাউন্সিল অন মুসলিম অর্গানাইজেশন মুসলিম ভোটার নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়। হিলারির পক্ষে তারা ক্যাম্পেইন শুরু করে। তবে পুরো আমেরিকায় মাত্র ৩৩ লাখ মুসলিম ভোটার নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবেন সেটাই বিবেচনার বিষয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবারের মতো ধর্মীয় পোলারাইজেশন হতে আর দেখা যায়নি। ভারতীয় হিন্দুদের ভোট পেতে ট্রাম্প হিন্দিতে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি মোদির আদলে বলেছেন, ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার’। কট্টরপন্থি হিন্দুদের একটি বড় অংশ ট্রাম্পকে বিজয়ী করার পক্ষে কাজ করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউজার্সিতে হিন্দু মৌলবাদীদের সমাবেশে যোগ দেন। ট্রাম্প ফান্ডে কট্টরপন্থি হিন্দুরা ৯ লাখ ডলার দান করেন। গত আগস্টে এক জরিপে দেখা গেছে ৭% হিন্দু ট্রাম্পের সমর্থক। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফ্রিকান-আমেরিকানদের কাছে হিলারির পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এদিকে উইকিলিকসে প্রকাশিত তথ্যে দাবি করা হয়েছে, আইএসআইএস গঠনের পেছনে ওবামা ও হিলারির হাত রয়েছে। এটি আবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে হিলারি শিবির তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে। ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আমেরিকার নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়াও একই দিনে ৩৪টি সিনেট এবং ৪৩৫টি কংগ্রেস পদে নির্বাচন হবে। সিনেট ও কংগ্রেস সদস্য সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতিটি জটিল। ভোটাররা সরাসরি প্রতি স্টেট বা টেরিটরিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ডেলিগেট নির্বাচন করেন, যা ইলেকটোরাল কলেজ নামে পরিচিত। এর ভোটার সংখ্যা ৫৩৮। যেই প্রার্থী ২৭০টি ভোট পাবেন তিনিই জয়ী হবেন। ইলেকটোরাল ব্যবস্থাটি পরোক্ষ। তাই কোনো প্রার্থী পপুলার ভোটে বিজয়ী হয়েও ইলেকটোরাল ভোটে হেরে গেলে প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জিতবেন, তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যেই নির্বাচিত হোন না কেন, নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। হিলারি বিজয়ী হলে আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথম একজন নারী প্রেসিডেন্ট হবেন। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে নারী কেলেঙ্কারি, যৌনতা, স্থ্থূলতা যার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তিনি হবেন বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির প্রেসিডেন্ট। লেখক : যুক্তরাষ্ট্র সফররত সাংবাদিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর