শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিরোধ নেই র‌্যাব পুলিশে, আছে সুস্থ প্রতিযোগিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিরোধ নেই র‌্যাব পুলিশে, আছে সুস্থ প্রতিযোগিতা

বেনজীর আহমেদ

র‌্যাব-পুলিশের মধ্যে কোনো ‘দ্বন্দ্ব’ নেই বলে দাবি করেছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ র‌্যাব কাজ করে পুলিশ আম্ব্রেলার (নিয়ন্ত্রণের) মধ্যেই। র‌্যাব-পুলিশের মধ্যে ভালো কাজ করার প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। সেটি ফেয়ার কমপিটিশন (সুস্থ প্রতিযোগিতা)। কিন্তু কোনো কনফ্লিক্ট (বিরোধ) নেই।’ তিনি জানান, ‘তাভেলা হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপারেশনের দায় স্বীকারের দাবি জঙ্গিদের, র‌্যাবের নয়।’ গতকাল সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন র‌্যাবপ্রধান বেনজীর আহমেদ। গুলশানে নিহত ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি ‘র‌্যাব-পুলিশে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে’ বলে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রসঙ্গেই বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় র‌্যাবের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান। চার মাস আগে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাভেলা হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই ঘটনায় ৮ অক্টোরব সাভারের আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে নিহত হন অভিযুক্ত নিউ জেএমবির সারোয়ার জাহান ওরফে আবদুর রহমান ওরফে শাইখ আবু ইবরাহিম আল-হানিফ। এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘৮ অক্টোবর র‌্যাব একই দিনে একাধিক অপারেশন পরিচালনা করে। ওই সময় সাভারের আশুলিয়ায় এক সন্ত্রাসী নিহত হয়। তার ছদ্মনাম ছিল আবদুর রহমান। আমরা প্রায় ১২ দিন তদন্ত করেছি। অনুসন্ধান চালিয়েছি। পরে তার নিজস্ব ও সাংগঠনিক পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছি। এরপর ২৫ অক্টোবর তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে তার ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক পরিচয় গণমাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে দেশবাসীকে অবহিত করি।’ ওই সময় অপারেশনে নিহতদের পরিচয় পাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার (আবদুর রহমান) পরিচয় নিয়ে সবারই প্রশ্ন ছিল, কে নিহত হলো। ওই সময় অধিকাংশের পরিচয় নিয়ে একটি সমস্যা হয়েছিল। এ কারণেই আমরা দেশবাসীকে তার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করি। এ সময় প্রায় ৪০ মিনিট আবদুর রহমানের ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক পরিচয় নিয়ে কথা বলি। আমরা কীভাবে তার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি, সে সম্পর্কেও মিডিয়াকে জানাই। এর বাইরে কোনো কথা গণমাধ্যমকে আমরা বলিনি।’ বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমাদের অফিস থেকে একটি প্রেস রিলিজ ইস্যু করা হয়, যেখানে এই জঙ্গিগোষ্ঠী কর্তৃক একাধিক অপারেশনের দায় স্বীকারের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে তাভেলা হত্যার বিষয়টিও ছিল। এটি হচ্ছে, জঙ্গিগোষ্ঠী কর্তৃক দায় স্বীকারের দাবি। তা কিন্তু র‌্যাবের দাবি নয়।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ডিবি ও র‌্যাবের সূত্রের বরাত দিয়ে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এগুলো বিভ্রান্তিকর। সত্যি কথা হচ্ছে, এটি জঙ্গিগোষ্ঠীর দাবি। র‌্যাব বা র‌্যাব মহাপরিচালকের দাবি নয়। তাভেলা হত্যার বিষয়টি র‌্যাব তদন্ত করেনি। যেহেতু তদন্ত আমরা করিনি, তাই সেই তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’ র‌্যাবপ্রধান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘তাভেলা হত্যার ঘটনাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এগুলো সাব-জুডিস মেটারও বটে। এ বিষয় নিয়ে বক্তব্যের কোনো সুযোগ নেই। কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দাবির নিরিখে তদন্ত হয় না। এটি নির্ভর করে সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর। প্রকৃতপক্ষে আমরা যে কথাগুলো বলেছি, যেভাবে মিডিয়াতে কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে, আমি মনে করি রং কনটেক্সটে প্রকাশিত হয়েছে।’ র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘গণমাধ্যমে তাভেলা হত্যা নিয়ে বড় আকারে যাদের নাম প্রকাশিত হয়েছে, তাদের সবাই জঙ্গিবাদের সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকরী ও আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত। এ নিয়ে কাজ করার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়, পুলিশের আইজি ও আমি কথা বলেছি। আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্বের প্রশ্নই ওঠে না।’

সর্বশেষ খবর