শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাবার কথাই বললেন সোহেল তাজ

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

বাবার কথাই বললেন সোহেল তাজ

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হৃদয়গ্রাহী এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। গত পরশু ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পেজে এ স্ট্যাটাসটি দেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে কারাগারের ভিতরে একদল বিপথগামী সৈনিক নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। আর ওই চার নেতার একজন সোহেল তাজের বাবা তাজউদ্দীন আহমদ। ওই স্ট্যাটাসে সোহেল তাজ বলেন, আজ থেকে ঠিক ৪১ বছর আগে এই দিনে পাঁচ বছর বয়সী একটি ছোট্ট ছেলে হারাল তার প্রিয় বাবাকে; যার হাত ধরে সে যেত বাড়ির পাশে আবাহনী মাঠে; যার হাত ধরে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে খুঁজে পেয়েছিল তার প্রথম স্কুল। সোহেল তাজ বলেন, টেলিভিশনের পর্দায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশিত আর জাতীয় পতাকা প্রদর্শিত হলে যিনি সব সময় মনে করিয়ে দিতেন দাঁড়িয়ে স্যালুট করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে। যিনি কোমলভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতেন মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের আত্মত্যাগের কথা। যিনি এই ছোট্ট ছেলেটিকে একটি আত্মবিশ্বাসী, দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করার গুরুত্ব শেখানোর ও অনুপ্রেরণা জোগানোর চেষ্টা করেছিলেন নানা কায়দায়। তিনি আরও লেখেন, এ ছেলেটির জীবনটা হঠাৎ করে পাল্টে গেল একদিন। ছেলেটি দেখতে পেল একটি লাশ, তার বাবার লাশ। লাশটি রাখা হলো একটি রুমে। আর সেই লাশ দেখতে এলো হাজার হাজার মানুষ। সেও অবাক হয়ে দেখতে লাগল সবার সঙ্গে। পরে সেও গেল বনানী কবরস্থানে। সেখানে সবাই তাকে প্রথমে মাটি দিতে বলল, সেও দিল। তার কাছে মনে হচ্ছে এটা যেন একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্নের মধ্য দিয়ে সে ভেসে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সময় পার হতে লাগল আর সেই স্বপ্নের আবরণ ধীরে ধীরে কেটে যেতে লাগল। তার পর থেকে তার মনে খালি প্রশ্ন আর প্রশ্ন। তার কেন বাবা নেই? অন্য সবার তো বাবা আছে। আরও সময় পার হলো কিন্তু প্রশ্নগুলো আরও জটিল হতে লাগল। কেন মেরে ফেলা হলো তার প্রিয় বাবাকে? উনি কী অন্যায় করেছিলেন? ওনাকে জেলে কেন রাখা হয়েছিল? আর জেলখানায় মেরে ফেলল কারা এবং কেন? এ প্রশ্নগুলো যখন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তখন সে তার মাকে বলতে শুনত, ‘আমি আমার স্বামী হারিয়েছি আর আমার সন্তানরা তাদের বাবাকে হারিয়েছে, কিন্তু দেশ কী হারাল? আমাদের ক্ষতি থেকে দেশের আরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেল। তারপর ৪১ বছর পার হয়ে গেল। ছোটবেলার সেই দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়েই বছরগুলো পার করল। সে বুঝতে পারল যে তার সত্তা তার সেই হারানো বাবার মাঝেই লুকিয়ে আছে। আজ ৩ নভেম্বর, ২০১৬। আজ থেকে ৪১ বছর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা দেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। বাংলাদেশ তার সত্তা খুঁজে পাবে তখনই যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানদের মতো নেতাদের আত্মত্যাগ, অবদান আমরা সঠিক এবং পৃথকভাবে মূল্যায়ন করতে পারব। তাদের আত্মত্যাগ ও আত্মদান খুলে দিক ইতিহাসের সেই জানালা যার গভীরে ঢুকে এই জাতি খুঁজে পাবে তার সত্তা।

সর্বশেষ খবর