রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সাবেক কারাগার পরিদর্শন

বাবার স্মৃতিচিহ্ন দেখে আবেগাপ্লুত হাসিনা-রেহানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বন্দী বাবার কক্ষ ও ব্যবহূত তৈজসপত্র দেখার সময়      স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন দুই বোন। গতকাল বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে ছোট বোন শেখ রেহানা ও শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক মুজিব ববিকে সঙ্গে নিয়ে কারাগারে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বাইরে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি কখনোবা মাঝারি বৃষ্টি পড়ছিল। কারাগারে প্রবেশ করেই তারা আলোকচিত্র গ্যালারি পরিদর্শন করেন। এখানে ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর কারাবরণের সময় থেকে নানা সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামের প্রায় ১৪৫টি দুর্লভ আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া কারাগারে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের মাত্র চার-পাঁচ হাত দূরেই বঙ্গবন্ধুর ব্যবহূত চশমা ও তামাকের পাইপের প্রতীকী স্থাপত্য নিদর্শনও প্রত্যক্ষ করেন তারা। এরপর তারা সোজা যান বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘরে। সেখানে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতির পিতা বাঙালির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘসময় যে কক্ষটিতে বন্দী জীবন কাটান তা ঘুরে ঘুরে দেখেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর নিজহাতে লাগানো কামিনী ও সফেদা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দুই বোন স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন। তারা বঙ্গবন্ধুর ব্যবহূত চৌকি, টেবিল, চেয়ার, খাবার পত্র, ভাঙা চায়ের কাপ, সিলভারের কেটলিসহ তৈজসপত্র দেখার সময় সেসব স্পর্শ করে যেন পিতার স্পর্শ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় দুই বোনেরই চোখে ছিল অশ্রু। এরপর জাতির পিতার অজু করার স্থান ও রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহূত ঘরটিও ঘুরে ঘুরে দেখেন তার দুই কন্যা। প্রধানমন্ত্রীর কারা পরিদর্শনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, সাবেক কূটনীতিক এ কে আবদুল মোমেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত, শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘর থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরাতন কারাগারের নকশা দেখেন। এ সময় একজন কারা কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নকশার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এখান থেকে তিনি যান জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর ‘মৃত্যুঞ্জয়ী সেলে’। সেখানে প্রবেশের মুখেই রয়েছে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লাশ হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত যে জায়গাটিতে মরদেহ রাখা হয়েছিল শান বাঁধানো সেই স্মৃতি চিহ্ন। জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরে প্রবেশের আগে সামনে সারিবদ্ধভাবে নির্মিত চার জাতীয় নেতার ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মৃত্যুঞ্জয়ী সেলের প্রথম কক্ষ, যে কক্ষে ৩ নভেম্বর কালরাতে ঘাতকরা জাতীয় চার নেতাকে একসঙ্গে জড়ো করে অত্যন্ত পৈশাচিক কায়দায় গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল, সেই কক্ষের সামনে এসে মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। সারিবদ্ধভাবে তিনটি কক্ষে জাতীয় চার নেতারা যেখানে থাকতেন, সেসব ঘরে প্রবেশ করে তাদের ব্যবহূত জিনিসপত্রও ঘুরে ঘুরে দেখেন তারা। কক্ষটিতে তারা বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। প্রায় এক ঘণ্টা পরিদর্শন শেষে তারা পিতার স্মৃতি বিজড়িত কারাগার ত্যাগ করেন।

সমবায় আন্দোলন জোরদারের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দেশের সমবায় আন্দোলনকে জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ৪৫তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার-২০১৪ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে সমবায় আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

টুঙ্গিপাড়া সফর স্থগিত : দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজকের নির্ধারিত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া সফর স্থগিত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর