সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চলছে গ্রেফতার অভিযান ইউএনও প্রত্যাহার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জাম আহমেদকে প্রত্যাহার করা  হয়েছে। জেলা প্রশাসক রেজুয়ানুর রহমান জানিয়েছেন, তাকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। এর আগে নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এদিকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলছে নাসিরনগর ও তার আশপাশ এলাকায়। পুলিশ জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় ৯ জনকে। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর জানান, তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ৫০০ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে শনিবার উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসকে (৩০) আটক করে এলাকাবাসী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে সেখান থেকে আটক করে থানায় নেয়। এ ঘটনায় রাতেই রসরাজের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে রবিবার সকালে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা এবং ভাঙচুর করে উগ্র মানসিকতার কিছু স্থানীয় লোক। এ সময় হামলাকারীরা ব্যাপক লুটপাটও করে। তাদের হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রসরাজ দাসের মামলা ডিবিতে : রসরাজ দাসের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে দায়েরকৃত মামলাটি গোয়েন্দা শাখায় ন্যস্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে মামলাটি গোয়েন্দা শাখায় ন্যস্ত করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ মামলার ফাইলপত্র নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

প্রতিবাদে মানববন্ধন : হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর, মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের সামনে গতকাল সকালে মানববন্ধন হয়েছে। গণসচেতন হিন্দু নাগরিক সমাজ ও পূজা উদযাপন কমিটির ব্যানারে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মানববন্ধনে অংশ নেয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। নাসিরনগরে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা ও তাদের বাড়ি-ঘর, মন্দির ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার  দেব, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত, অরুণ জ্যোতি ভট্টাচার্য প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সংবাদ সম্মেলন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে নাসিরনগর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দাবি করা হয়, মন্ত্রী কখনই হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে কটূক্তি করেননি। হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতাদের কথা শুনে এ কটূক্তির কথা বলেছেন। আসলে তা সত্য নয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন দেব। এ সময় পূজা উদযাপন পরিষদের উপজেলা সভাপতি কাজল  জ্যোতি দত্ত উপস্থিত ছিলেন। অঞ্জন দেব লিখিত বক্তব্যে বলেন, মন্ত্রী ছায়েদুল হক ছাত্রজীবন থেকেই অসাম্প্রদায়িক  চেতনার সর্বস্তরের জনগণকে ভালোবেসে আসছেন। তার  নেতৃত্বেই ১৯৬৮ সালে উপজেলার দত্তবাড়িতে তিনি প্রথম আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে তিনি এমন বক্তব্য দিতে পারেন বলে তারা বিশ্বাস করেন না।

জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জানতে হাইকোর্টে রিট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছে। গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না এ রিট করেন। হামলা রোধের ক্ষেত্রে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানাতে রুল চাওয়া হয়েছে। রিটে জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও এসপি, নাসিরনগরের ইউএনও এবং ওসিকে বিবাদী করা হয়েছে। পরে আসকের আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, নাসিরনগরে হামলা ইতিহাসের একটি জঘন্যতম ঘটনা। আবেদনে নাসিরনগরের ওই ঘটনা রোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না,  সে বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর