সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মন্ত্রীর বক্তব্য সহিংসতা উসকে দিয়েছে

জিন্নাতুন নূর

মন্ত্রীর বক্তব্য সহিংসতা উসকে দিয়েছে

খুশি কবীর

মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর হামলা যে ধরনের অপ্রীতিকর বক্তব্য দিয়েছেন, তা সহিংসতাকে আরও বেশি উসকে দিয়েছে। এই ইস্যুতে মন্ত্রী যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং বক্তব্য দিয়েছেন, এর পরই আবার দ্বিতীয় দফা আক্রমণ চালানো হয়। অথচ ছায়েদুল হকের দায়িত্ব ছিল তার এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেখানে তার এলাকায় যাওয়ার পরপরই পুনরায় হামলার অর্থ হলো, তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো         

অথবা তিনি এর সঙ্গে জড়িত। মন্ত্রী যদি সত্যি হিন্দুদের বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তবে এ হামলাকে তিনি আরও উসকে দিয়েছেন। আর তা না দিয়ে থাকলে তিনি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। মানবাধিকার কর্মী ও ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবীর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। খুশি কবীর বলেন, ‘নাসিরনগর পরিদর্শন করে আমি খুবই মর্মাহত ও হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশে এ চিত্র আমাদের এভাবে দেখতে হবে তা ভাবিনি। আমরা ঘটনার পরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিদর্শনে যাই। সেখানে হামলার শিকার স্থানীয়দের কষ্ট, বেদনা ও আস্থাহীনতা দেখেছি। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, তারা কি এ দেশে থাকতে পারবেন! তাদের মধ্যে এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তা, আশ্রয়হীনতা ও ভীতি তৈরি হয়েছে। আর এ পরিস্থিতি দেশ ও রাষ্ট্রের একটি ভয়ঙ্কর অবস্থা আমাদের সামনে তুলে ধরেছে, যা আমাদের জন্য ভীষণ নেতিবাচক। আমরা দেখেছি, বাচ্চাদের মধ্যে তুলনামূলক আতঙ্ক বেশি ছিল। সেখানে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও ভাঙচুর করা হয়েছে। সব জায়গাতেই হারমোনিয়াম নামক বাদ্যযন্ত্রটি ভাঙা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, যারা আক্রমণ চালিয়েছে তারা উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী। যারা গান-বাজনাকে হারাম মনে করে। এ ছাড়া স্থানীয়দের পূজামণ্ডপ ও পূজাঘরের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। লুটপাট হয়েছে। হামলার শিকার কিছু নারী রাতে ঘটনার সময় অন্য স্থানে ছিলেন। পরে ফিরে এসে দেখতে পান, ঘরে কিছু নেই। পুরুষরা পালিয়ে গেলেও যেসব নারী ঘরে ছিলেন, তারা ভাবতেও পারেননি যে তাদের ওপর এভাবে আক্রমণ করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। এই নারীনেত্রী বলেন, ‘এর আগেও ফেসবুকে ছবি আপলোডের মাধ্যমে রামুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ছোটখাটোভাবে সাতক্ষীরা, যশোরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাহলে অতীতে এ ধরনের ঘটনার পরও প্রশাসন কীভাবে দুটো গ্রুপকে সমাবেশ করার অনুমতি দিল, এটি আমাদের প্রশ্ন ছিল। আর সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পরও তারা কেন সঠিকভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আহমদিয়াদের ওপর কয়েক দফা আক্রমণ হয়েছে। সে হিসেবে কেন তারা নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করেনি। উত্তরে প্রশাসন আমাদের জানিয়েছিল, এমন অবস্থা হবে তারা তা ভাবেনি। এ ইস্যুতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আমাদের বড় প্রশ্ন আছে।’ খুশি কবির বলেন, ‘দ্বিতীয়বার আক্রমণের বিষয়ে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আক্রমণকারীরা এ সাহস কীভাবে পেল! জঙ্গি দমন ইস্যুটিকে সরকার যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, একইভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দমনের ক্ষেত্রে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর