মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অবসান হচ্ছে সব জল্পনা-কল্পনার

ফরিদা ইয়াসমিন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

অবসান হচ্ছে সব জল্পনা-কল্পনার

বিশ্বের দৃষ্টি এখন মার্কিন নির্বাচনের দিকে। আজ ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অবসান হতে যাচ্ছে সব জল্পনা-কল্পনার। একই দিনে প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১২ গভর্নর ও ৪৩৫ কংগ্রেসম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সারা বিশ্বের কাছে এ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ দেশটি বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। দেশটির প্রেসিডেন্টই বিশ্বের  বিভিন্ন ইস্যু নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডেমোক্র্যাট দলের হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন আর রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের নির্বাচন নানা নাটকীয়তায় ভরপুর। নির্বাচনী প্রচারণায় পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি, নোংরা প্রচারণা আমেরিকার ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চলছে গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সংস্থার মতামত জরিপ। এসব জরিপে জয়-পরাজয়ের কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু এবারের জরিপগুলোতে দেখা গেছে দ্রুত পাল্টে যাওয়ার চিত্র। সকালে এগিয়ে থাকা প্রার্থী বিকেলে পিছিয়ে যাচ্ছেন। তাই জয়-পরাজয় নিয়ে ভোটারদেরও উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা নির্বাচন বানচাল করতে রাশিয়া সাইবার হামলা চালাতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অপরদিকে আইএসআইএস ভোট বর্জন করতে জনগণকে হুমকি দিয়েছে। সব মিলিয়ে জনগণের মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক রয়েছে। গতকাল শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারণায়ও যথারীতি প্রার্থীরা নিজকে যোগ্য ও অপর প্রার্থীর নানা দোষ তুলে ধরেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ই-মেইল কেলেঙ্কারিতে হিলারির বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া যায়নি বলে ঘোষণা দেয়। এর ফলে জরিপগুলোতে দ্রুত হিলারি এগিয়ে যেতে থাকেন। সংবাদ মাধ্যম এনবিসির সর্বশেষ জরিপে হিলারি ৪৭% এবং ট্রাম্প ৪১% ভোট পেয়েছেন। ইলেকটোরাল ভোটেও হিলারি এগিয়ে রয়েছেন। সর্বশেষ হিসাবে হিলারি ২০৮টি, ট্রাম্প ১৬৪টি, বাকি ১৬৬টি এখনো সিদ্ধান্তহীন রয়েছে। নির্বাচনে জিততে হলে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে। কোনো অঘটন না ঘটলে শেষ মুহূর্তে সব দিক বিবেচনায় হিলারির বিজয়ের সম্ভাবনাই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। হিলারির প্রচার-ক্যাম্পের একজন সক্রিয় সদস্য তোফাজ্জল লিটন বলেন, ‘আমি বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছি। হিলারির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন দেখেছি। তবে কেউ কেউ বলেছেন, ট্রাম্পকে পছন্দ নয়। আবার আমরা কোনো মহিলাকেও ভোট দেব না।’ টাইম ম্যাগাজিনের রাজনৈতিক কলামনিস্ট জো ক্লেইনের মতে, আমেরিকার ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দুটি প্রধান দল থেকে এত কম যোগ্য প্রার্থী আর কখনো আসেননি। এদিকে হিলারিকে সমর্থন জানিয়ে সংগীতশিল্পী বিয়ন্সে বলেছেন, ‘আমাদের ইতিহাস তৈরির সুযোগ এসেছে। আসুন, হিলারিকে ভোট দিয়ে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের ইতিহাস তৈরি করি।’ বিশ্লেষকরাও ধারণা করছেন, আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়ে হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছেন। আজকের নির্বাচনে একই সঙ্গে হোয়াইট হাউস, সিনেট ও কংগ্রেস কোনো দলের হাতে যাবে তা নির্ধারণ হবে। এখন সিনেট ও কংগ্রেস রিপাবলিকানদের দখলে আর হোয়াইট হাউস ডেমোক্র্যাটদের দখলে। এবার ভোটারের সংখ্যা ২০ কোটির বেশি। তবে এবার ভোটারের মধ্যে নানা মেরুকরণ হয়েছে। হিলারির পক্ষে মেক্সিকান, হিস্পানিক. এশীয়সহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা রয়েছেন। এদিকে  কট্টরপন্থি শ্বেতাঙ্গ ও মুসলিমবিরোধী কট্টররা ট্রাম্পের পক্ষে রয়েছেন। মুসলিমরা জোরেশোরেই নেমেছেন হিলারির পক্ষে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের একটি বড় অংশও হিলারির পক্ষে রয়েছে। ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে চিহ্নিত রাজ্যগুলো হচ্ছে—ফ্লোরিডা, ওহাইও, নর্থ কারোলিনা, নেভাদা, আইওয়া, আরিজোনা ও কলোরাডো। এই স্টেটগুলোর ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে জয়-পরাজয়। এই স্টেটগুলোর অধিকাংশে এগিয়ে আছেন হিলারি। আমেরিকার নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।  তবে সব হিসাব-নিকাশের অবসান হবে আজই। লেখক : যুক্তরাষ্ট্র সফররত সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর