শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নাসিরনগরে হামলা

আরও দুই মামলা রিমান্ডে আটজন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে চারটি মামলা ও একটি জিডি হলো। মামলায় আসামি করা হয়েছে অন্তত ২ হাজার ৭০০ ব্যক্তিকে। ইতিমধ্যে পুলিশ ৭৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার রাতে সর্বশেষ ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গতকাল কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠায়।

এদিকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রথম দফায় গ্রেফতার ১১ জনের রিমান্ড শুনানি গতকাল নাসিরনগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালতে অনুষ্ঠিত হয়। আদালত তাদের মধ্যে আটজনকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তারা হলেন উজ্জ্বল মিয়া, মামুন মিয়া, ইয়ামিন মিয়া, শাহীদ মিয়া, রুনাইদ, খায়রুল মিয়া, বাবুল মিয়া, ছোট্ট মিয়া। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তাণ্ডব ও ভাঙচুর-পরবর্তী পরিস্থিতিতে হিন্দু বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার সঙ্গে কারা জড়িত তা শনাক্ত করা গেছে ও তাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। খুব অল্প সময়ে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে গ্রেফতার করতে বিলম্ব করায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক পুলিশি তত্পরতা চালানো হয়েছে। সেই সঙ্গে রাতভর স্বেচ্ছাসেবকদের পাহারা বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. রেজওয়ানুর রহমান বলেছেন, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী, আনসার-ভিডিপিসহ সরকার ও প্রশাসনের সব নিরাপত্তাকর্মী সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় কাজ করছে। পুলিশের পাশাপাশি তারাও পাহারা দিচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘যারা অপরাধী তারাই গ্রেফতার হবে। যারা অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত, তাদের নাম-ঠিকানা জেনেছি।’ নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে টিন ও অর্থ বিতরণ : নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকালে টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৫১টি পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ ও টিন বিতরণ করা হয়। নাসিরনগর সদর উপজেলার কাশিপাড়ার ১২টি পরিবারকে তিন বান্ডিল করে টিন, নগদ ৯ হাজার টাকা; হরিপুর ইউনিয়নের ১৬টি পরিবারকে দুই বান্ডিল করে টিন ও নগদ ৬ হাজার টাকা এবং সদরের আরও ২৩টি পরিবারকে দুই বান্ডিল করে টিন ও নগদ ৬ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম : নাসিরনগরের ঘটনা সুপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব পরিদর্শন শেষে গতকাল বিকালে নাসিরনগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীরউত্তম, মহাসচিব হারুন হাবিব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ম. হামিদ বক্তব্য দেন।

সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী : সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, বাঞ্ছারামপুরের এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম গতকাল সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর ও ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সান্ত্বনা ও প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন। পরে তিনি মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হকের সঙ্গে স্থানীয় ডাকবাংলোয় সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য মন্ত্রী ছায়েদুল হকের হাতে ২ লাখ টাকা তুলে দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক তানজিল আহমেদসহ উপজেলার শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ইসলাম কখনো হামলা-ভাঙচুর সমর্থন করে না : গতকাল এদারায়ে তালিমিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা আশেকে এলাহি ইব্রাহীমির নেতত্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শীর্ষ আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল নাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে। সকালে দলটি উপজেলার গৌরবাড়ি মন্দির, দত্তবাড়ি মন্দিরসহ ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা ও বাড়িঘর পরিদর্শন করে। এ সময় প্রতিনিধি দলের নেতা মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, এ ন্যক্কারনজক ঘটনায় আলেমসমাজ অত্যন্ত মর্মাহত। ইসলাম কখনো হামলা-ভাঙচুর সমর্থন করে না।

সর্বশেষ খবর