বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

গুডবাই ওবামা

শামছুল হক রাসেল

গুডবাই ওবামা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। কথাটি উচ্চারিত হলেই চোখে ভেসে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিমান এক শাসকের ভাবচ্ছবি, যে শাসক তার ব্যক্তিত্ব, প্রভাব ও কর্মযজ্ঞের কারণে সারা দুনিয়ায় সব সময় ‘আলোচিত মানুষ’। কখনো-কখনো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার ভূমিকা তাকে বিতর্কিত ও ঘৃণিতও করে তোলে। সেদিক থেকে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা খুব স্বচ্ছন্দেই, কোনো প্রকার ঝাঁজালো বিতর্কের আবর্তে নিজেকে না জড়িয়ে ২০১৭ সালের  ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস (মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন) থেকে বিদায় নিতে চলেছেন। খুব কমসংখ্যক প্রেসিডেন্ট এ ধরনের কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছেন। গুডবাই ওবামা! ৮ বছর আগে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ঢুকেছিলেন। তার উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এরই সঙ্গে হোয়াইট হাউস নতুন অতিথি বরণ করতে ক্ষণ গণনা শুরু করেছে। ২০১২ সালের নভেম্বরে ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের বছরই তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ওবামার পারিবারিক জীবনের স্বচ্ছতা ও মাধুর্য দেশবাসীর কাছে তাকে প্রিয় করে তোলার অন্যতম উপাদান বলে গণ্য করা হয়। তিনি মিশেলকে বিয়ে করেন ১৯৯২ সালে। তাদের দুই মেয়ে— মালিয়া ও শাশা। বলা হয়, রাজনৈতিক জীবনে পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন ওবামার ক্যারিয়ারের অন্যতম টনিক। ওবামার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ২০০৪ সাল। সে বছর ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরে ডেমোক্রেট দলের জাতীয় সম্মেলনে তিনি মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল রাজনীতির ধারায় তাকে একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ওবামা জাতীয় পরিসরে মোটামুটি অচেনাই ছিলেন। তার অসামান্য বক্তৃতাটির ফলে তিনি মুহূর্তেই জাতির কাছে পরিচিতি লাভ করেন। এ ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে বারাক ওবামা মার্কিন কংগ্রেসের একজন সিনেটর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন? সিনেটর হিসেবে কাজ করার সময়ই তিনি অনেকের নজর কাড়েন? তার কথা, দৃঢ়তা, মনোবল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজারো মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়? তিনি হয়ে ওঠেন আমেরিকান ড্রিম? এর পরের গল্প সবারই জানা। ওবামার শাসনামল বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদকালটি মূল্যায়নে এখন ব্যস্ত রয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বৈরী কংগ্রেসের বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও জনকল্যাণী কর্মসূচি বাস্তবায়নে যে দৃঢ়তা ওবামা দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তা বিরল। নিকট ইতিহাস বলছে, পরপর দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্টরা মেয়াদের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে তুলনামূলক শান্ত সময় অতিবাহিত করেন। এ ক্ষেত্রে ওবামা নিরবচ্ছিন্ন স্বস্তি পেয়েছেন বলা যায় না। দুই মেয়াদে যেসব ইস্যু ওবামাকে ব্যস্ত রেখেছে তার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা, আফগানিস্তান ও ইরাক ইস্যু, রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, মার্কিন-পাকিস্তান-চীন নীতি, কিউবার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি এবং হালের আইএস ইস্যু। তবে শেষের দিকে ওবামা নতুন কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে না গিয়ে তার নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ রাখেন। এমনকি অন্যান্য প্রেসিডেন্ট ‘প্রশ্নবোধক আচরণে’র কারণে মেয়াদের শেষ দিকে যেখানে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে খুব একটা সাফাই গাইতে পারতেন না, সেখানে ওবামা নিজেকে বেশ উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করেছেন। হিলারির পক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্পের মতো অস্থিরচিত্ত ও বিবেকরহিত মানুষকে আমেরিকার জনগণ কিছুতেই প্রেসিডেন্ট পদে বসাবে না। এই বিশ্বাসে আমি অটল।’ তার এ বিশ্বাস যথার্থ কিনা সারা বিশ্ব আজই তা জেনে যাবে।

সর্বশেষ খবর