বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যে কারণে ইতিহাস গড়া হলো না হিলারির

প্রতিদিন ডেস্ক

যে কারণে ইতিহাস গড়া হলো না হিলারির

পরাজয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশে আবেগঘন ভাষণ দেন হিলারি

এবার যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন তিনিই ইতিহাস গড়বেন— এ আবহ তৈরি হয়েছে গত জুলাইয়ে দুই প্রধান দল ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানরা তাদের প্রতিনিধি ঘোষণা করার পর। ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে মনোনয়ন জেতেন হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান পার্টির হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোয়া ২০০ বছরের মার্কিন গণতান্ত্রিক ইতিহাসে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নেই। সে হিসেবে হিলারি প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস পড়বেন, এমন মন্তব্য মাসের পর মাস করে আসছিল বিশ্বের সব প্রভাবশালী গণমাধ্যম ও বোদ্ধা। কিন্তু না, ইতিহাস গড়তে পারেননি হিলারি। বরং পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ না হয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন আবাসন ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সব জায়গায় আলোচনা ছিল কোনো সন্দেহ ছাড়াই জিতবেন হিলারি। তবে সে ইতিহাস গড়া হলো না সাবেক  ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের। নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত বেশির ভাগ জনমত সমীক্ষাই বলছিল হিলারি জিতছেন। কয়েকটি সমীক্ষা তো হিলারিকে প্রায় ৪ শতাংশ এগিয়ে রেখেছিল। মার্কিন গণমাধ্যমের বড় অংশ সঙ্গে ছিল তার। এমনকি রিপাবলিকান নেতাদেরও একটি অংশ প্রকাশ্যে তাকে সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন। হলিউডের নামকরা সেলিব্রিটিরাও তার সঙ্গে ছিলেন। তার পরও সব হিসাব ভুল প্রমাণ করে হিলারি হেরে গেলেন। বিদ্বেষ, বিতর্ক, যৌন নিপীড়নের একের পর এক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকায় ফিরল রিপাবলিকান শাসন। ইংরেজিতে ‘সিজ দ্য ডে’ বলে যে প্রবাদ আছে, তাকে কাজে লাগিয়ে জিতে গেলেন ট্রাম্প। এত জরিপ, পূর্বানুমান, এত জল্পনা-কল্পনা সত্ত্বেও কী কারণে পরাজিত হলেন হিলারি? তবে কি নারী হওয়ার কারণেই প্রেসিডেন্ট হতে পারলেন না তিনি? হিলারির পরাজয়ের কারণ হিসেবে এ প্রশ্নটি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। কেননা আমেরিকানরা যতই আধুনিক হোন, তাদের ভিতর এখনো লিঙ্গবৈষম্য প্রবল। একজন নারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না অনেক মার্কিনি। তাই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে অনেক ডেমোক্রেটও ভোট দিয়েছেন ট্রাম্পকে। এটি নিঃসন্দেহে হিলারির পরাজয় ত্বরান্বিত করেছে। হিলারির পরাজয়ের পেছনে আরও একটি বড় কারণ তার ই-মেইল কেলেঙ্কারি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের অভিযোগে এফবিআইয়ের তদন্ত হিলারির নির্বাচনে ঝাঁকুনি দেয়। তা ছাড়া নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে এফবিআই প্রধান জেমস কোমে যখন ঘোষণা দেন, হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত নতুন করে করা হচ্ছে, সেটি হিলারির নির্বাচনে প্রবলভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকে মনে করেন, আফ্রিকান-আমেরিকান, স্প্যানিশভাষী ল্যাটিনোস, মহিলা, কলেজ শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ তরুণ-তরুণী ভোটারদের চারটি অংশকে ধরে প্রেসিডেন্ট পদে বসতে চেয়েছিলেন হিলারি। ওবামার পরপর দুবার জয়ের পেছনে মার্কিন ভোটারদের এ চারটি অংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু ফল বলছে, এ চারটি অংশের কাছ থেকেই প্রত্যাশিত সমর্থন পাননি হিলারি। যেমন আফ্রিকা-আমেরিকানদের মধ্যে বরাবরই জনপ্রিয় ওবামা। সেই জনপ্রিয়তার জোয়ারে তরী ভাসাতে চেয়েছিলেন হিলারি। তরী ভেসেছে। কিন্তু যে বেগে চললে ওভাল অফিসে পৌঁছানো যায় তা আসেনি। অনেকে মনে করেন, হিলারির মূল ধাক্কা এসেছে কলেজশিক্ষার্থী কম বয়সীদের কাছ থেকে। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের হেঁয়ালিপনা, বিদ্বেষ এ অংশটিকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল বলে অনেকে মনে করছিলেন। হিলারিও এদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেল ২০১২ সালে ওবামা যেখানে এই অংশের থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন সেখানে হিলারির ভাগ্যে জুটেছে ৫৪ শতাংশ। কেন এমন হলো? অনেকের মতে এই অংশের মধ্যে হিলারি নন, প্রবলভাবে জনপ্রিয় ছিলেন বার্নি স্যান্ডার্স।

ডেমোক্রেটদের প্রার্থী বাছাইয়ের লড়াইয়ে (প্রাইমারি) হিলারির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল বার্নির। দেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্নির বামঘেঁষা চিন্তাভাবনা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই বার্নিকে শেষ পর্যন্ত হিলারির কাছে হারতে হয়। পরে দেখা যায় হিলারিকে ডেমোক্রেট প্রার্থী করার সেই প্রক্রিয়ায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি।

ফাঁস হয়ে যাওয়া ই-মেইল প্রমাণ করে কীভাবে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশন—ডিএনসিতে হিলারির জন্য ঘুঁটি সাজানো হয়েছিল। এ অংশটি হিলারির পেছনে সেভাবে দাঁড়ায়নি। পাশাপাশি উঠে এসেছে ডেমোক্রেটদের চিরাচরিত ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত শ্রমিক শ্রেণি। মার্কিন উৎপাদনশিল্পের মন্দা কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প এদের মনে আউটসোর্সিং, মুক্তবাণিজ্যের ভয় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন। কাজ হারানোর ফলে বা হারানোর আশঙ্কায় এদের একটি অংশ ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন বলেও মনে হচ্ছে। পাশাপাশি চিরাচরিত রিপাবলিকান ভোটারদের বুথমুখী করতে পেরেছেন ট্রাম্প। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ, সমকামীদের অধিকার, ইরান ও কিউবার সঙ্গে নতুন সম্পর্ক— ওবামার বেশকিছু নীতির এরা প্রবল বিরোধী। ব্যালটে সেই বিরোধিতার স্বাক্ষর রেখে ট্রাম্পকে আগামী চার বছরের জন্য ওভাল অফিসে থাকা নিশ্চিত করেছেন তারা। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের স্লোগান ছিল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ অর্থাৎ ‘আমেরিকাকে আবারও মহান কর’। ট্রাম্পের এ স্লোগান ২০০৮ সালের বারাক ওবামার স্লোগান ‘চেঞ্জ, উই ওয়ান্ট’-এর মতোই ভোটারদের অনুপ্রাণিত করেছে। অনেকেই মনে করেছেন, রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ডেমোক্রেটিক হিলারির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি ভালো রাখবেন। তাই তারা হিলারিকে ভোট না দিয়ে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর