শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বাংলাদেশ এসেছে নতুন সুযোগ

বিশ্লেষণ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বাংলাদেশ  এসেছে নতুন সুযোগ

নির্বাচনী প্রচারাভিযানে মুসলিম ও অভিবাসী বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাংলাদেশের তেমন কোনো ক্ষতির শঙ্কা নেই বলেই মনে করছেন কূটনীতি ও ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা। কারণ চাইলেই একটি দেশের পররাষ্ট্র নীতি পরিবর্তন করা যায় না। পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন আছে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এমন বড় স্বার্থ নেই যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরুতেই বাংলাদেশ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যস্ত হবেন। আর অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন বিচার বিভাগই সুরক্ষা দেবে। বিচার বিভাগকে উপেক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব বলেও মনে করছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ী মহল বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের গত দুই মেয়াদে বাংলাদেশ তেমন কিছু পায়নি, তাই নতুন করে হারাবার কিছু নেই। বরং একজন ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাণিজ্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন কিছুর প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। সাবেক কূটনীতিকরা বলেছেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতারা অনেক ধরনের বক্তব্যই দিয়ে থাকেন। তারা নিজেরাও জানেন, তারা যা বলছেন সেটার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এটা বিশ্বের প্রতিটি দেশেই হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশই এর বাইরে নয়। একই কৌশল অনুসরণ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া ও মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ট্রাম্প মূলত তার ভোটার হিসেবে মার্কিন শ্বেতাঙ্গদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই উসকানিমূলক এসব বক্তব্য দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্যই থেকে যাবে। হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেও মার্কিন সিনেট ও বিচার বিভাগের সমর্থন ছাড়া পারবেন না। আর পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও ডোনাল্ড ট্রাম্প আমূল পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে প্রত্যাশা সাবেক কূটনীতিকদের। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও গত সাত বছর টানা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে এসেছেন রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেন। তার মতে, ট্রাম্পের জয়ের কারণ তার দেওয়া দেশাত্মবোধের ডাক। ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজের প্রতি সমর্থনের জোয়ার আনতে সক্ষম হয়েছেন। তাই মেয়াদকালীন সময়ে ট্রাম্প নিজের দেশকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আয় দ্বিগুণ করতে পারেন সে চেষ্টাই তিনি করবেন। নির্বাচনী প্রচারণাকালে তিনি কী বলেছেন তা হয়তো ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতোই ভুলে যাবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সবাইকে নিয়েই দেশ গড়ায় মন দেবেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ক্যাম্পেইনার ট্রাম্প এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য থাকবে। এটা নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্পের প্রথম ভাষণেই স্পষ্ট হয়েছে। নির্বাচনের প্রচারণায় ট্রাম্প অনেক কিছু বলে ভয় ধরালেও নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যে ভাষণ দিয়েছেন সেখানে সবাইকে নিয়ে চলার কথা বলেছেন। যারা তাকে ভোট দেননি, তাদেরও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এটা তার আগের অবস্থানের পরিবর্তন বলেই আমার বিশ্বাস। আমার মনে হয়েছে ট্রাম্প নতুন যাত্রা করতে চান। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন ‘সম্পর্ক বর্তমানে যা আছে তা-ই থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র আগেই শুল্কমুক্ত কোটা  থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছে। সুতরাং সেখানে নীতি আরও কঠোর হলেও বাংলাদেশের ওপর নতুন করে নিরূপ প্রভাব পড়ার কিছু নেই। তবে ট্রাম্প যদি অভিবাসন প্রশ্নে কড়াকড়ি আরোপ করেন তাহলে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ট্রাম্প চাইলে তার নির্বাহী আদেশে অভিবাসন নীতি বদলে ফেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিরা জটিলতায় পড়তে পারেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগ অভিবাসীদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন, যেখানে একজন অবৈধ অভিবাসীও আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এমনকি একজন অবৈধ অভিবাসীরও ‘অবৈধ’ হিসেবে আইনি স্বীকৃতি ও অধিকার আছে। অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ইস্যুতে তার সিদ্ধান্ত সিনেটরদের ভেটোর মুখে পড়তে পারে। প্রেসিডেন্ট যা করবেন বলে ভাবছেন তারা তার বিরোধিতা করতে পারেন। তাই, এটা সহজ নয়। আর ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের আলোচিত অনেক বক্তব্যই দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সবই কথার কথা থেকে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়াদে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির খুব একটা হেরফের হবে না। কারণ পররাষ্ট্রনীতি রাতারাতি বদলে যায় না, এতে সময় লাগে। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এমন কোনো পক্ষ নয় যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক স্বার্থ জড়িত। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলেই আমরা প্রত্যাশা করি। তবে এ জন্য আমাদের প্রশাসনকে গুরুত্বের সঙ্গে কিছু দায়িত্বপালন করতে হবে। ট্রাম্পের প্রশাসনকে বোঝাতে হবে বাংলাদেশ সহনশীল, মধ্যপন্থি এবং শান্তি প্রিয় একটি দেশ। একই সঙ্গে এটিও বলতে হবে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যে জঙ্গিবাদের উত্থান চেষ্টা হয়েছিল তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে অত্যন্ত সফলভাবে আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়েছে। যা পৃথিবীতে বিরল ঘটনা। এগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে ট্রাম্প যদি কোনো রক্ষণশীল নীতিও গ্রহণ করে তাহলেও বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

সর্বশেষ খবর