শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের কুকর্ম জোর প্রচার না পাওয়ায় হিলারির হার

প্রতিদিন ডেস্ক

ট্রাম্পের কুকর্ম জোর প্রচার না পাওয়ায় হিলারির হার

ড. নীনা আহমেদ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়ান-আমেরিকান বিষয়ক উপদেষ্টা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. নীনা আহমেদ বলেছেন, ট্রাম্পের কুকর্মগুলোর জোর প্রচার পায়নি বলেই হিলারি হেরে গেছেন। ড. নীনা বাস করেন পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে। ডেমোক্রেটিক পার্টির সংগঠক হিসেবে তার তৃণমূলের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। কয়েক মাস আগে তাকে ফিলাডেলফিয়া সিটির ডেপুটি মেয়র নিয়োগ করা হয়। ক্লিনটন পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে ড. নীনা এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারির পক্ষে চষে বেড়িয়েছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু নিজের অঙ্গরাজ্য পেনসিলভেনিয়াতেও হিলারিকে বিজয় এনে দিতে না পেরে প্রচণ্ড ব্যথিত নীনা। খবর এনআরবির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের ‘অবিশ্বাস্য বিপর্যয়’-এর পেছনে মৌলিক কয়েকটি ইস্যু চিহ্নিত করেছেন ড. নীনা। গত বুধবার রাতে ফিলাডেলফিয়া থেকে টেলিফোনে এনআরবি নিউজকে বলেন, মিডিয়ার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুকর্মগুলোর তথ্য তেমনভাবে মিডিয়ায় আসেনি। এমনকি, জনমত জরিপেও প্রকৃত তথ্য উপস্থাপিত হয়নি। জরিপ ফলাফলের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ পাওয়ায় আমরাও ভোট প্রার্থনার গতি-প্রকৃতি যথাযথভাবে অনুসরণে সক্ষম হইনি। ট্রাম্প ১৬ বছর ট্যাক্স দেননি, নিজ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীসহ মালামাল সরবরাহকারীদের ঠকাতে ছয়বার নিজেকে ‘দেউলিয়া’ ঘোষণা করেছেন, ভুয়া ইউনিভার্সিটির নামে শত শত ছাত্রছাত্রীর বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে তরুণীদের সঙ্গে তার অসদাচরণ ইত্যাদি তথ্য মিডিয়ায় ঠিকমতো আসেনি। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের ঘটনাটি প্রতিনিয়ত মিডিয়ায় এসেছে। ড. নীনা বলেন, এশিয়ান, লাতিনো, কৃষ্ণাঙ্গরা ক্রমান্বয়ে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে। এমন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে নীরবে প্রচারণা চালায় ট্রাম্পের লোকজন। শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছেন— এমন গুজবও শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয়। এটিও অন্যতম একটি কারণ হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়ে। বর্ণবাদী মনোভাবের আমেরিকান নারী-পুরুষরা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারেন না হিলারির মতো বড় মনের মানুষকে। সাদা, কালো, বাদামি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, ইহুদি সব ধর্ম, বর্ণ আর গোত্রের মানুষকে আপন করে নিয়ে বর্ণাঢ্য একটি রাজনৈতিক অভিযাত্রা শুরু করেছিলেন হিলারি। এটি বর্ণ আর জাতিবিদ্বেষী ট্রাম্প এবং তার অনুসারীদের রোষের কারণ হয়ে ওঠে। ভিতরে ভিতরে তারা মার্কিন মূল্যবোধের পরিপন্থী তত্পরতা চালিয়ে স্বল্প শিক্ষিত মানুষদের বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি নিজেরাও ভুল পথে চালিত হচ্ছেন। ড. নীনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখছেন অভিবাসীরা। তা সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। মুসলমানদের আগমন বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন। মেক্সিকো থেকে লোক আসার পথ চিরতরে বন্ধ করতে দেয়াল নির্মাণের হুংকার দিয়েছেন। এর সবকিছুই যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের পরিপন্থী কিন্তু তা মিডিয়ায় ফলাও করে আসেনি। গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষের ভোটের মূল্য নেই আমেরিকায়। হিলারি ক্লিনটন পপুলার ভোট পান ৫ কোটি ৯৮ লাখ ১৪ হাজার ১৮টি। ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৬৭ ভোট। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ভোট বেশি পেয়েও হিলারি জয়ী হতে পারলেন না। এর আগে আল গোরসহ আরও পাঁচ প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে আমেরিকান নির্বাচনী মারপ্যাঁচে ধরাশায়ী হতে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর