শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হোয়াইট হাউসের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে বাংলাদেশ

জুলকার নাইন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট সরকারের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন ধরনের সম্পর্ক তৈরি হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে  হোয়াইট হাউসের রাজনৈতিক সম্পর্কের শীতলতা আর থাকছে না। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করে রাজনৈতিক সম্পর্ক ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ এখন ঢাকার সামনে। আর অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেয়ার সংশয়ও কেটে গেছে নির্বাচিত হওয়ার পর দেয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এমনিতেই মার্কিন বিচার  বিভাগ ও বাস্তবতা উপেক্ষা করে তার বিতর্কিত ঘোষণাগুলোর বাস্তবায়ন করতে পারতেন না। আর ইতিমধ্যেই তিনি ঐক্যের ডাক দিয়ে সেগুলো থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন ট্রাম্প তার প্রশাসন নিয়ে কাজ শুরু করার পর দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের ইস্যু উত্থাপনই একমাত্র কাজ বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকরা। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গত মেয়াদে হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন   শেখ হাসিনার সরকারের এক ধরনের শীতলতা তৈরি হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে অনেকটাই ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। বয়স ও আইনি কারণে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে আর রাখা সম্ভব না হলেও ‘বন্ধু’র জন্য দেনদরবারও করেছিলেন হিলারি। সেই থেকেই টানাপড়েন। পরে জিএসপি ও পদ্মা সেতুর ঋণও জড়িয়ে যায় এসব জটিলতায়। এই সময়ে সামরিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অনেক দূর এগিয়ে গেলেও রাজনৈতিক সমঝোতা আর হয়ে ওঠেনি। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় দায়িত্ব পালনকালীন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎও পাননি দীর্ঘ সময়। এমনকি তার বিদায়ী সাক্ষাৎও প্রলম্বিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতিয়ালিতেও বিরক্ত ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সেই হিলারি ক্লিনটন ডেমোক্রেট দলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের  ক্ষমতায় এসে গেলে দ্বিপক্ষীয় জটিলতা আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা ছিল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় সেটা একধাক্কায় দূর করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সম্পর্ক অনেক উন্নত হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে সেই সম্পর্ক আরও এগিয়ে চলেছে। আমার বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দুই দেশের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করবেন। দুই দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক অথনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সিকিউরিটি, সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তা এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নির্বাচনের আগে নানাজনে নানা কর্থাবার্তা বলেছিল। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। তবে আগের চেয়ে এখন দুই দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরও সুসংগঠিত হবে। ঢাকার পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ‘রাজনৈতিক মহলে যে বক্তব্যই থাকুক নতুন যে কোনো মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এগিয়ে যাবে। কারণ এগুলো পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতেই চলে। আর সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হয়ে যায় না। তবে এটাও অনস্বীকার্য, রাজনৈতিক সম্পর্ক বা বোঝাপোড়া ভালো হলে যে কোনো ধরনের ইস্যু এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়। সিদ্ধান্ত নেয়া যায় দ্রুততম সময়ে। সরকারের কূটনৈতিক বিষয়াদির দেখভাল করা অপর এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নিলে তার সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। বুধবার ভোটের ফল আসার পর বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রথম যারা ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও আছেন। অভিনন্দন বার্তায় ট্রাম্পেও নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করছি। সেই সঙ্গে ট্রাম্পকে সস্ত্রীক ঢাকা সফরেরও আমন্ত্রণ জানানো হয় সেই অভিনন্দন বার্তায়। সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমানের মতে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর হিলারি ক্লিনটনের সম্পর্কের মধ্যে ড. ইউনূস একটি বিষয় বলে ধারণা চালু আছে। কিন্তু রিপাবলিকানদের সঙ্গে তো বাংলাদেশের সরকারের এরকম কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাংলাদেশ নিয়ে কখনো কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন বলে শোনা যায়নি। সুতরাং আমাদের কোনো ভয় নেই। তাই নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী।’ এর আগে, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাতুলব আহমাদ জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। আবুল হাসান চৌধুরীর পরামর্শ, ‘বাংলাদেশ যে সহনশীল, মধ্যপন্থি এবং শান্তিপূর্ণ দেশ এবং এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান চেষ্টা যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে সফলভাবে আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়েছে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।’ মাতুলব আহমাদের আশা, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছু না কিছু বাণিজ্যিক সুবিধা পেতেই পারে। তাই ট্রাম্পেও মেয়াদের ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশের বিষয়টি তার সামনে তুলে ধরতে হবে।’

সর্বশেষ খবর