শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ট্রাম্পবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ, সহিংসতা

সব মিডিয়ার মদদ : ট্রাম্প

প্রতিদিন ডেস্ক

ট্রাম্পবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ, সহিংসতা

অরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন ট্রাম্পবিরোধীরা —সিএনএন

‘নির্বাচন পদ্ধতির মারপ্যাঁচে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ বছর পিছিয়ে গেল। তথ্য-প্রযুক্তির শীর্ষে অবস্থানকারী একটি দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বরণ করে নেওয়ার মধ্যে আনন্দ দূরের কথা, স্বস্তির কিছুই নেই’—এমন মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কের প্রখ্যাত অ্যাটর্নি ম্যারি ডি সিলভার। ম্যারি বলেন, ‘আমার কলেজগামী কন্যার প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারিনি। বলতে পারিনি যে, ট্রাম্প কোনোভাবেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন।’ অ্যাটর্নি ম্যারি উল্লেখ করেন, ‘এভাবেই আমরা নতুন প্রজন্মকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। সত্যকে আড়াল করে প্রকারান্তরে নিজেরাই প্রতারকের পর্যায়ে যাচ্ছি।’ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কোনোভাবেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে অনাগ্রহীরা বৃহস্পতিবারও দ্বিতীয় দিনের মতো তুমুল বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক সিটিতে। যা পরবর্তীতে সহিংসতায় রূপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। পোর্টল্যান্ডে হাজারো মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করে। পরে বিক্ষোভকারীরা দোকানপাট ও গাড়ির কাচ ভাঙচুর করে। এই বিক্ষোভকে দাঙ্গা হিসেবে ঘোষণা করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা পটকাজাতীয় জিনিস ছুড়েছে। ময়লার একটি বড় পাত্রে আগুন দিয়েছে। পুলিশ এ সময় ২৯ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া বড় বিক্ষোভ হয় নিউইয়র্ক সিটিতে। ট্রাম্প টাওয়ারের চারপাশ ঘিরে রেখেছে শত শত পুলিশ আর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তার পরেও শত শত আমেরিকান পোস্টার-প্লাকার্ড হাতে সেখানে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ‘নো হেইট, নো ফিয়ার-ইমিগ্র্যান্টস আর ওয়েলকাম হিয়ার’, ‘ইমপিচ ট্রাম্প’, ‘নট মাই প্রেসিডেন্ট’ লেখা এসব ব্যানার-ফেস্টুন ছাড়াও স্লোগানে উচ্চারিত হয় তীব্র নিন্দা আর ধিক্কার। এ ছাড়া হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস বর্জন করে রাজপথে নামে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, শিকাগোতে। নিউইয়র্কের একটি রেস্টুরেন্টে ডিনার করার সময় অ্যাটর্নি ম্যারির সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী অ্যাটর্নি পেরি ডি সিলভার, ব্যাংকার র্যা হুই আর তরুণ ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদল। পুরো রেস্টুরেন্টের সবার আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন তারা। সেখানে কারা প্রচণ্ড ক্ষোভের সঙ্গে ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোকপাত করছেন। অ্যাটর্নি পেরি বলেন, ‘এ অবস্থাকে মেনে নেওয়ার অর্থ হবে প্রেসিডেন্সিকে বিকৃত মানুষের হাতে সঁপে দেওয়া।’ আকতার হোসেন বাদল বলেন, ‘নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিকল্প নেই। জনসাধারণের ভোটের হিসেবেই জয়-পরাজয় নির্ধারণের বিধি তৈরি করতে হবে।’ ‘এই আমেরিকা গড়ে উঠেছে অভিবাসীদের রক্ত আর ঘামে। অথচ অভিবাসনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবছেন ট্রাম্প। মুসলমানদের নিষিদ্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন। এমন লোক হোয়াইট হাউসে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর কী করবেন সেটি সবাইকে শঙ্কায় ঠেলে দিয়েছে।’ র‌্যা হুই বলেন, ‘যারা ভোট দিয়েছেন তারা ফলাফল দেখে হতবাক। আর এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে রাজপথে।’ অ্যাটর্নি পেরি বলেন, ‘বেশ কটি মামলা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এসব মামলার বাদীরা যদি আপস-রফা না করেন তাহলে নির্ঘাত ট্রাম্পকে জেলে যেতে হবে। অপকর্মের দায় থেকে রেহাই পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না—যদি মামলা দায়েরকারীরা সোচ্চার থাকেন।’ বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে বলে মার্কিন মিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিক্ষোভের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১৯ মিনিটে এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘সবচেয়ে সফল এবং উন্মুুক্ত পরিবেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সবেমাত্র শেষ হলো। এখন মিডিয়ার উসকানিতে প্রফেশনাল প্রতিবাদকারীরা প্রতিবাদে মেতে উঠেছে, যা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয়।’ এর আগে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় কমিটির মুখপাত্র শন স্পাইসার অবশ্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণের জন্য। সে সময় হয়তো অনেক কিছুরই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় দিনে বিক্ষোভ হয় লসএঞ্জেলেস, অকল্যান্ড, ফিলাডেলফিয়া, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, দেলওয়ার,  বোস্টন, টেক্সাস, কলরাডো, বাল্টিমোর এবং নিউইয়র্কে। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। দুদিনের দেড় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারের কথা বলেছে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। এনআরবি নিউজ

 

 

সর্বশেষ খবর