সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে তাড়ানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

পরাজয়ের জন্য এফবিআই পরিচালককে দুষলেন হিলারি

প্রতিদিন ডেস্ক

৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে তাড়ানোর ঘোষণা ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হয় —এএফপি

বিক্ষোভের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০-৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে তাড়ানো হবে।  সিবিএস টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার সকালে এই ঘোষণা প্রচারের কথা থাকলেও এর চুম্বক অংশ আগেই ওয়েবসাইটে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমটি।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা যা করতে যাচ্ছি তা হলো অপরাধী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড রয়েছে, অপরাধী চক্রের সদস্য, মাদক ব্যবসায়ী- এ ধরনের প্রচুর লোক যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে, সংখ্যা সম্ভবত দুই মিলিয়ন- এমনকি এটা তিন মিলিয়নও হতে পারে, এদের যুক্তরাষ্ট্রে থেকে বের করব। আমরা এদের দেশ থেকে বের করতে যাচ্ছি বা জেলে ঢোকাতে যাচ্ছি। কারণ এরা অবৈধভাবে এখানে আছে।’ সীমান্ত সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘একবার এটা করা গেলে ইমিগ্রেশন ব্যুরো ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বাকি অবৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে ধারণা পাবে।’ সত্যি সত্যি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে (মেক্সিকোর সঙ্গে) দেয়াল নির্মাণ করতে চান কিনা- প্রশ্নের জবাবে তিনি সরাসরিই বলেন, ‘হ্যাঁ’। তবে ভোটের প্রচারে মুসলিমদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধের কথা বলে সমালোচনার মুখে পড়ার পর তা থেকে সরে ট্রাম্প বলেছেন, ‘যেসব দেশ থেকে সন্ত্রাসী আসছে, সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করা হবে।’ এদিকে ট্রাম্পের জয়কে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না লাখ লাখ মার্কিনি। ফলাফল ঘোষণার পর থেকে ক্ষোভ প্রকাশ ও বিক্ষোভ বাড়ছে। শুধু কি আমেরিকা, ট্রাম্পের জয়ে বিষোদগার বাড়ছে গোটা বিশ্বে। একের পর এক ট্রাম্পবিদ্বেষী বক্তব্য দিচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা থেকে শুরু করে ন্যাটো প্রধান পর্যন্ত।  চতুর্থ দিনের মতো শনিবার রাতেও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা এখন দাবি জানাচ্ছেন ট্রাম্পকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের। অর্থাৎ অভিবাসন, মুসলমান, ল্যাটিনো, নারী সম্পর্কে ইতিপূর্বে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাহার করলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। না হলে বিক্ষোভের তীব্রতা আরও বাড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মতামতের পরিমাণও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর ‘মিলিয়ন মহিলা’র সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক-ভিত্তিক একটি সংস্থার প্রধান বব ব্ল্যান্ড ফেসবুকে ‘উইমেন্স মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩৫ হাজার মহিলা সাড়া দেন। নারী সম্পর্কে অশালীন মন্তব্যকারী কোনো উদ্ধত মানুষের হোয়াইট হাউসে অধিষ্ঠিত হওয়ার অধিকার নেই—এমন মতামত ব্যক্ত করা হচ্ছে এই কর্মসূচির সমর্থকদের পক্ষ থেকে। শনিবার নিউইয়র্ক সিটির ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্ক থেকে কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। শত শত পুলিশ ঘিরেও রেখেছে ট্রাম্প টাওয়ার। বিক্ষোভের কারণে ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। লসঅ্যাঞ্জেলেস সিটির ম্যাকআর্থার পার্কে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ সম্পর্কে সিটি মেয়র এরিক গার্সেটি বলেন, ‘আমার সিটি নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। এই সিটির ছাত্রছাত্রীদের নিয়েও আমি অহংবোধ করি। তারা সবাই নিজেদের অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে দেশাত্মবোধের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটাতে দ্বিধা করেনি।’ মেয়র আরও উল্লেখ করেন, ‘যদিও মিডিয়ায় সে বিষয়ই গুরুত্ব পায় যে, কয়েকজন বিক্ষোভকারী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে কিংবা পথচারিদের বিব্রত করছে।’ ‘এটি ভুলে গেলে চলবে না, যারা আইনের অবজ্ঞা করে, তাদের দমনে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হয় না। তবে যারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করে, তাদের বাধা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার কারও নেই’—বলেন মেয়র। এদিকে, নিউইয়র্ক মেয়র  (ডেমোক্রেট) বিল ডি ব্লাসিয়ো গত শুক্রবার মুসলিম-আমেরিকানদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। মেয়র তাদের অভয় দিয়েছেন, ‘ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন-বিরোধী কিংবা মুসলিম ধর্মবিরোধী কোনো প্রক্রিয়ারই আওতায় থাকবে না এই সিটি। এখানে সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আগের মতোই অবাধে বসবাস করবেন। একই সঙ্গে ইমিগ্রেশনের স্ট্যাটাস নিয়েও কোনো কথা বলা হবে না। সিটি মেয়র হিসেবে এই সিটির নাগরিকের সব অধিকার সুরক্ষায় আমি বদ্ধ পরিকর।’

হারের জন্য এফবিআই প্রধানকে দুষলেন হিলারি : নির্বাচনে হারের পর থেকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে খুব একটা প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। তবে তার পরাজয়ের জন্য এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে তার ই-মেইল নিয়ে পুনরায় তদন্তের হঠাৎ ঘোষণা নির্বাচনী প্রচারণার শক্তি নষ্ট করে দিয়েছিল। পার্টির দাতাদের সঙ্গে হিলারির ফাঁস হওয়া এক টেলিফোন আলাপ থেকে এই তথ্য জানা গেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন হিলারি রাষ্ট্রীয় তথ্য আদান-প্রদানে ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যাতে অনেক স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৫ সালে প্রথম তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি উঠলেও তদন্তের পর গুরুতর কিছু পাওয়া যায়নি বলে এফবিআই জানিয়েছিল। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না আনার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন আগে এফবিআই প্রধান জেমস কোমি কংগ্রেসকে আবারও জানান, তিনি নতুন কিছু ই-মেইলের সন্ধান পেয়েছেন এবং সেগুলো নিয়ে পুনরায় তদন্ত করবেন। হিলারির মন্তব্য, এ ঘটনা তার নির্বাচনী ইমেজে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যা সে সময় রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সুবিধাজনক অবস্থায় আনে। যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন ম্যাগাজিন কোয়ার্তজকে হিলারির অর্থবিষয়ক কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, হিলারি বলেছেন, নির্বাচন অসফল হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমাদের ধারণা, ই-মেইলের নতুন তদন্ত নিয়ে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির দেওয়া চিঠির কোনো ভিত্তি না থাকলেও সেটি জয়ের দিকের যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।’ কোয়ার্তজকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তৃতীয় বিতর্কের পর ডেমোক্রেট পার্টির সবাই খুবই খুশি ছিলেন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যেই তাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল। কেবল অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য নিয়ে তারা কিছুটা দোলাচলে ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ই-মেইল নিয়ে এফবিআই পরিচালকের ঘোষণায় সব বদলে গেল। পরে অপরাধমূলক কিছু না পাওয়ার ঘোষণা দিলেও সে সময় পরিস্থিতি সামলানোর সুযোগ ছিল না। এনআরবি নিউজ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর