সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুই ট্রাকের সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ সাতজন নিহত

প্রতিদিন ডেস্ক

বগুড়ার শেরপুরে গতকাল গভীর রাতে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ এবং তাদের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও রংপুর, মেহেরপুর ও নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন।

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শেরপুরের মহিপুর বাজার এলাকায় সারবোঝাই ও পুলিশ বহনকারী দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এ সময় তিন পুলিশসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল রাত সোয়া ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত পাঁচ পুলিশ হলেন নীলফামারীর ডোমারের ধনীপাড়া গ্রামের লতিফুর রহমানের  ছেলে মো. শাহজাহান কবির (৩৫), গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মুকুন্দপুরের রেজওয়ান আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৩), লালমনিরহাট কালিগঞ্জের উত্তর ঘনশ্যাম গ্রামের মাহানন্দের ছেলে প্রণব রায় (৩৫), সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া থানার কালিগঞ্জ গ্রামের ছাবের হোসেনের ছেলে বেতার কনস্টেবল সামসুল আলম (৫১), গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব উদাখালি গ্রামের মৃত জোবেদ আলীর ছেলে বেতার কনস্টেবল সোহেল রানা (৩৪) ও কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রফেসরপাড়ার পরেশ চন্দ্র দাসের ছেলে শ্যামল কুমার দাস (৪২)। নিহতদের মধ্যে আরও রয়েছেন পুলিশ বহন করা ট্রাকচালক রংপুর সদরের আবদুল গনির ছেলে আবদুর রহমান (২৮)। আহত ৬ জন হলেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মইনুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রুবেল চৌধুরী ও মনোয়ার হোসেন। বাকি তিনজন দুর্ঘটনাকবলিত সারবোঝাই ট্রাকের চালক, তার সহকারী এবং পুলিশ বহন করা ট্রাকের চালকের সহকারী মিজান (৩৫)। দুজনের কোনো পরিচয় জানা যায়নি। আহতদের মধ্যে মইনুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম থেকে পুলিশ সদস্যরা রিকুইজিশন করা একটি ট্রাকযোগে তাদের পুরনো পোশাক জমা দিয়ে নতুন পোশাক আনার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে বগুড়ার শেরপুর মহিপুর বাজার এলাকায় বিপরীতগামী দিনাজপুরগামী সারবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জন নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে ১ জন এবং হাসপাতালে এসে আরও ১ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন ৫ জন। নিহতদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি রোডের বাকসাপাড়ায় গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বাস উল্টে আমেনা খাতুন (৭) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। নিহত শিশু যমুনা নদীচরের মল্লিকপাড়া চরের আমিনুল ইসলামের মেয়ে। এ সময় কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।

আর্থিক অনুদান : শেরপুরে সড়ক দুঘর্টনায় নিহত ৫ পুলিশ সদস্যের জানাজা গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় বগুড়া পুলিশ লাইনস মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে নিহতদের লাশ পুলিশের তত্ত্বাবধানে তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান জানান, জানাজা শেষে বগুড়া ও কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের পরিবারকে আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করা হয়।

বিষাদে আশীর্বাদের আনন্দ :  লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, আশীর্বাদ করার জন্য পাত্রের বাড়িতে গিয়েই জানতে পারলেন পাত্র পুলিশ কনস্টেবল প্রণব চন্দ্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে বিষাদে ছেয়ে যায় আশীর্বাদের সব আনন্দ। প্রণব চন্দ্র বগুড়ার শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের উত্তর ঘনশ্যাম গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মহানন্দ রায়ের ছেলে। জানা গেছে, অক্টোবর মাসে ছুটিতে বাড়ি এসে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার গোতামারী গ্রামের সুকুমার রায়ের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের জন্য পছন্দ করেন প্রণব। মেয়ে পছন্দ হওয়ায় পাত্রের বাড়ির লোকজনের আমন্ত্রণে মেয়ের বাবা সুকুমার রায় আশীর্বাদ ও বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার জন্য হবু জামাইয়ের বাড়িতে আসেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল সকালে প্রণবের বাড়িতে আশীর্বাদের আয়োজন চলছিল। এ সময় মোবাইল ফোনে খবর আসে বগুড়া শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্যের সঙ্গে প্রণব চন্দ্র নিহত হয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যেই আশীর্বাদের আয়োজন বিষাদে পরিণত হয়। পুরো এলাকায় কান্নার রোল পড়ে যায়। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে প্রণব চন্দ্রকে হারিয়ে বৃদ্ধা মা পূর্ণিমা রায় শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বাবা মহানন্দ রায় ছেলের মৃত্যু খবরে নির্বাক হয়ে পড়েন।

কুড়িগ্রামে শোকের ছায়া : কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলা পুলিশের পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রফেসরপাড়ার পরেশ চন্দ্র দাসের পুত্র শ্যামল কুমার দাস ওই দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ায় পুলিশ লাইনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম।

বিভিন্ন স্থানে আরও মৃত্যু : রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মজিদপুর এলাকায় গতকাল সকালে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে ধাক্কা দিলে দুটি ট্রাকই উল্টে গিয়ে দুজন নিহত হন। দুজনই দুই ট্রাকচালকের সহকারী। এরা হলেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার হাতিবান্ধা এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে হাসান আলী (২৫) ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাফটানা সাইটারি এলাকার আবদুস সামাদের ছেলে আলম ইসলাম (২২)।

মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বাউট নামক স্থানে বাসের ধাক্কায় হানিফ হোসেন (৩২) নামের এক ছাগল ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হানিফ হোসেন গাংনী উপজেলার আকুবপুর গ্রামের দিদার হোসেনের ছেলে। এ ছাড়া মেহেরপুর সদর উপজেলার বামনপাড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় হেদায়েত আলী (৫০) নামে এক কৃষক আহত হয়েছেন।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই বাচ্চু মিয়া (৩৫) নামে একজন নিহত ও আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাচ্চু মিয়া নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বামনিয়া গ্রামের মৃত সৈয়ম উদ্দিনের ছেলে। তিনি ফেরি করে ফুলঝাড়ু বিক্রি করতেন বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর