মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ত্রাণ ফিরিয়ে দিল সাঁওতালরা

হাতকড়া খুলে দেওয়ার নির্দেশ, শিল্প সচিবের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক ও রংপুর, গাইবান্ধা প্রতিনিধি

ত্রাণ ফিরিয়ে দিল সাঁওতালরা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল পরিবারগুলোর জন্য পাঠানো জেলা প্রশাসনের সরকারি ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে সাঁওতালরা। এদিকে পুলিশের গুলিতে আহত রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাঁওতালদের কোমর থেকে দড়ি ও হাতকড়া খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ নিয়ে লুকোচুরি করছে হাসপাতাল   কর্তৃপক্ষ। শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়ী নয়। স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করেছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালরা আবার আক্রমণের ভয়ে ১০ জনের এক একটি দল গঠন করে রাত জেগে গ্রাম পাহাড়া দিচ্ছে। গতকাল সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর ও জয়পুর গ্রামে উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ত্রাণ বিতরণ করতে যান গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হান্নান। প্রাথমিক তালিকাভুক্ত ১৫০টি সাঁওতাল পরিবারের সদস্যরা এ সময় জানান, তাদের বাপ-দাদার জমি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তারা সরকারি কোনো সাহায্য নেবেন না।

হাতকড়া খুলে দেওয়ার নির্দেশ : আহত সাঁওতালদের কোমর থেকে দড়ি ও হাতকড়া খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আগামীকালের মধ্যে এ বিষয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার, রংপুরের ডিআইজি ও গাইবান্ধার পুলিশ সুপারকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শিল্প সচিবের সংবাদ সম্মেলন : সাঁওতালদের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়ী নয়, স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। শিল্পসচিব বলেন, বর্তমানে সংঘর্ষ মিটে গেলেও আন্দোলনকারীরা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে রেখেছে। এর পেছনেও স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনা রয়েছে। হাতকড়া নিয়ে লুকোচুরি : চিকিৎসাধীন সাঁওতালদের কোমর থেকে দড়ি ও হাতকড়া খুলে দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ মানছে না রংপুরের পুলিশ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাতকড়া পরা অবস্থায় দুই সাঁওতালের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। সাংবাদিকরা চলে গেলে পুনরায় হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়।

চিনিকল শ্রমিকদের সংবাদ সম্মেলন : পুলিশ আদিবাসী সংঘর্ষ ও আদিবাসীদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় গতকাল রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন গোবিন্দগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে। এতে ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন প্রধান বলেন, ৬ নভেম্বর সাঁওতালরা পুলিশ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের ওপর হামলা করে। এতে পুলিশসহ তীরবিদ্ধ ৩০ জন আহত হন। এরপর সন্ধ্যায় যৌথবাহিনী অভিযান শেষে ফিরে আসার পর স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা দখলকৃত জায়গার ঘরগুলোতে আগুন দেয়।

সাঁওতাল পল্লীতে সংঘর্ষের নেপথ্যে : ১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ১ হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করে। তখন থেকে এসব জমিতে উৎপাদিত আখ চিনিকলে সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ওইসব জমিতে মিল কর্তৃপক্ষ আখ চাষ না করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর কাছে লিজ দেয়। তারা লিজ নেওয়ার পর ওইসব জমিতে তামাক, ধান, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করতে থাকে। মিলের জমিতে আখ চাষ না হওয়ায় দুই বছর আগে এসব জমি বাপ-দাদার জমি বলে তা ফেরতের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাঁওতাল সম্প্রদায়। আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ১ জুলাই প্রায় ১০০ একর জমি দখলে নিয়ে শত শত একচালা ঘর নির্মাণ করে তারা। তাদের এই কাজে সহযোগিতা করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ বুলবুল।

ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল : আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল গোবিন্দগঞ্জে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের কাছে স্থানীয় এমপি ও ইউপি চেয়ারম্যানের বিচার চান সাঁওতাল পল্লীর অধিবাসীরা। প্রতিনিধি দলে ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক টিপু মুন্সী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী এবং কেন্দ্রীয় সদস্য রেমন্ড আরেং।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর