মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত ৪

নরসিংদী

নরসিংদী প্রতিনিধি

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চল নীলক্ষায় বর্তমান ও সাবেক চেয়াম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। প্রতিপক্ষের টেঁটার আঘাতে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তিন এসআই ও দুই কনস্টেবলসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে ১৩ জনকে। নিহতরা হলেন— আমিরাবাদ গ্রামের মৃত আলতু মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া (৫৫), সোনাকান্দি গ্রামের মরফত আলীর ছেলে খোকন মিয়া (৩৫), একই গ্রামের মঙ্গল মিয়ার ছেলে মামুন (২৩) ও সালামত মিয়ার ছেলে শাহজাহান (৪০)।

নিহতরা সবাই সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গতকাল দুপুরে জেলার রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষায় হরিপুর, আমিরাবাদ, সোনাকান্দি, বীরগাঁও এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওসি আজাহারকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর থেকে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।  পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন মো. তাজুল ইসলাম। আনারস প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার। নির্বাচনে মো. তাজুল ইসলাম বিজয়ী হন। এরপর থেকে এলাকার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিজয়ী চেয়ারম্যান ও পরাজিত সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ শুরু হয়। গত সাত মাসে দফায় দফায় কমপক্ষে ১৫ বার সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকরা। এতে কমবেশি তিন শতাধিক লোক হতাহত হয়। ভাঙচুর করা হয় শতাধিক বাড়িঘর। এসব ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকারকে গ্রেফতার করে জেলা হাজতে প্রেরণ করলে তিনি জামিনে মুক্ত হন। পুলিশের বিশেষ তত্পরতায় সাময়িক ভাবে বন্ধ হয় সংঘর্ষ। সম্প্রতি সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকারের সমর্থক শহীদ হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন। এরপর থেকে প্রতিপক্ষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সংঘবদ্ধ হতে শুরু করেন। এতে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই মধ্যে শনিবার সকালে দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দফায় দফায় চলতে থাকে সংঘর্ষ। দুই দিনের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়। অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল সকালে দুই পক্ষ পুনরায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবিরের উপস্থিতিতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এ সময় উত্তেজিত সমর্থকরা পুলিশের ওপর ককটেল ও টেঁটা নিক্ষেপ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবারবুলেট, সাউন্ড গ্যানেড ও শটগানের গুলিসহ প্রায় তিন শতাধিক গুলি ছুড়েন। এতে ককটেলের স্প্লিন্টারে আহত হয় রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিন। টেঁটাবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হন। টেঁটাবিদ্ধ হয় রায়পুরা থানার এসআই আসাদ। গুরুতর আহত হয় এসআই জিয়া, তোফাজ্জল ও দুই কনস্টেবলসহ উভয় পক্ষের ৫০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নরসিংদী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। আহতদের উদ্ধার করে রায়পুরা, ভৈরব, নরসিংদী ও পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নীলক্ষা ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায় বাতাসে ভেসে আসছে পোড়া গন্ধ। একটু সামনে এগোতেই দেখা গেল পোড়া বাড়ির দৃশ্য। ঘরগুলোর ভিতরে কিছুই নেই শুধু পোড়া কাঠ, কয়লা আর ছাই। টিনগুলিও পুড়তে পুড়তে ভঙ্গুর হয়ে দলা-মোচরা হয়ে গেছে। ঘরে আগুন দেওয়ার পূর্বে ইচ্ছেমতো লুটপাট চালানো হয়েছে। বাড়ির সামনে খড়ের পাড়ায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এ এস পি সার্কেল মো. বশির উদ্দিন জানান, প্রায় সাতটি গ্রামের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ওসিসহ ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর