বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর আগ্রহ শেখ হাসিনাকে ঘিরে

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

নিজামুল হক বিপুল, মারাকাশ, মরক্কো থেকে

ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর আগ্রহ শেখ হাসিনাকে ঘিরে

মারাকাশে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের গতকাল নবম দিনে প্ল্যানারি অধিবেশনের উদ্বোধন করেন মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের ৮০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেন।

স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বিকালে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা সম্মেলনে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় তার বক্তব্য দেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। ২০২০ সালে প্যারিস চুক্তি কার্যকর, বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত অবস্থান নেবেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং সাবেক পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি এবারের সম্মেলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যেও আমরা। তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তির রূপরেখা বাস্তবায়ন ও সবুজ জলবায়ু তহবিলে উন্নত বিশ্বের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রতাপশালী এই দেশ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারে—এমন খবর মারাকাশের সম্মেলন কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র সবুজ জলবায়ু তহবিলে (জিসিএফ) যে তিন বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটিও তারা আর দেবে না বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশ। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, ব্রাজিল, ভারত, জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না। এই চুক্তির একটা আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনোভাবেই প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবেন না। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন। তবে সেটা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। বান কি মুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনে বিশ্ব রাজনীতি বা অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ইতিমধ্যে প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বের ১১০টি দেশ অনুমোদন দিয়েছে। এককভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও ইতিমধ্যে এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। ফলে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ কম। 

গত সোমবার সম্মেলনের অষ্টম দিনের আলোচনায় বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নুরুল কাদির। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বল্পোন্নত  দেশগুলোর তহবিলে (এলডিসি) অর্থায়নের বিষয়ে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, তারা ২৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত এই তহবিলে অর্থায়ন করবে। এ ছাড়া ২০২০ সাল থেকে সবুজ জলবায়ু তহবিলে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, এ ব্যাপারে একটা রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে। উন্নত দেশগুলো এই রোডম্যাপ তৈরির কাজ করছে। তবে এসব সিদ্ধান্তের ব্যাপারেই কতিপয় প্রভাবশালী দেশ নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর