বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স

মানিক মুনতাসির

ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবে সরকার। এতে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। নরসিংদীর রায়পুরা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদেরও খুব শিগগিরই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এসব ঘটনার সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষ ইন্ধন জুগিয়েছে কিনা— সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ তিনটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের মুখোমুখি করা হবে। এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছে। বিশেষ করে হিন্দু, সাঁওতালসহ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সর্বোচ্চ কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, গোবিন্দগঞ্জ এবং নাসিরনগরের ঘটনায় কোনো পক্ষের ইন্ধন ছিল কিনা— সেটা অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী যদি এতে ইন্ধন দিয়ে থাকে তাহলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। সেখানে জমিজমা নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেছে কিনা— সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাসিরনগরে পুলিশের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় কীভাবে হামলা হয়েছে— সেটার কারণও খোঁজা হচ্ছে। গতকাল বৈঠকে উপস্থিত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন। পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা এ ব্যাপারে সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। সে ঘটনাকে পুলিশ বাহিনীর ব্যর্থতা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পরবর্তীতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য পুলিশ বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। যে স্থানে ওই ঘটনা ঘটে সেখানে এর আগে কোনো সাঁওতাল পল্লী ছিল না। উল্লিখিত জমি ১৯৫৪ সাল থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে চিনিকলের জন্য আখচাষে ব্যবহৃত হচ্ছিল। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুসহ পুলিশের আইজিপি শহিদুল হক, র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, যারা সাঁওতালদের জন্য মায়াকান্না কাঁদছে, মাসখানেক আগে তারা আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের বলেছি সাঁওতালদের বুঝিয়ে শুনিয়ে জমি ছেড়ে দিতে। এভাবে সরকারি জমি কেউ দখল নিতে পারে না। কিন্তু তারা প্রত্যেকবারই চিনিকলের কর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে। আমরা এই জমি দখল না নিলে ওই ভূমিদস্যুরা সাঁওতালদের তাড়িয়ে ওই জমির দখল নিত।

শিল্পমন্ত্রী বলেন,  নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ এবং রায়পুরের ঘটনা একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এরই মধ্যে সরকার প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে ব্যবস্থা নিয়েছে। নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো মহলের যোগসাজশ থাকার সম্ভাবনা আছে।

সর্বশেষ খবর