বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবারও অনিশ্চিত তিস্তা চুক্তি

প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি যাচ্ছেন ১৮ ডিসেম্বর দেড় ডজন চুক্তির প্রস্তুতি

জুলকার নাইন

এবারও অনিশ্চিত তিস্তা চুক্তি

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ফের আলোচনায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন নয়াদিল্লি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের এজেন্ডাগুলোর এক নম্বরে থাকছে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গ। যদিও প্রতিবেশী দেশটির তরফে এখনো কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চুক্তির প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তার কথা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য শেখ হাসিনার এই সফরে ভারতের সঙ্গে প্রায় দেড় ডজন চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ সম্পৃক্ত এসব চুক্তির প্রস্তাবনা নিয়ে শেষ মুহূর্তের আলোচনা চলছে। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র  মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের সফরে আগামী ১৮ ডিসেম্বর নয়াদিল্লি যাবেন। এই সফরের প্রস্তুতি হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের গত সপ্তাহে ভারত সফরে এই দিনক্ষণ প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। যদিও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ টার্গেট করে সফরের চুক্তি ও অন্যান্য সহযোগিতার প্রস্তুতি আগেই নেওয়া শুরু করে ঢাকা ও দিল্লির কর্মকর্তারা। সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করবেন। অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোর পাশাপাশি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনীর হাতে নিহত ভারতের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দিতে পারেন। নরেন্দ্র মোদির আগ্রহে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সৈন্যদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। জানা যায়, গত বছরের জুনে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের ফিরতি হিসেবেই এ সফরের আয়োজন হচ্ছে। মোদির সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। এবার সেসব চুক্তি ও সমঝোতার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হবে। নতুন দেড় ডজন চুক্তির বিষয়ে চলছে আলোচনা। প্রস্তাবিত নতুন চুক্তির মধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পণ্য চলাচলের কারিগরি ও কৌশলগত দিক নিয়ে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ (এসওপি) বিষয়ক চুক্তি এবং উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল চুক্তির আলোচনা চলছে। নতুন অন্যান্য বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান এজেন্ডা থাকছে তিস্তা চুক্তি। এ ব্যাপারে দিল্লির পক্ষ থেকে আগে থেকে প্রতিশ্রুতি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সম্মতি এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি তার ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতাবিষয়ক একটি চুক্তি এবার হতে পারে। মূলত এ প্রকল্পে ভারতকে সম্পৃক্ত রাখতে চায় বাংলাদেশ। কারণ, গঙ্গার পানি ভারত থেকেই আসে। ফলে গঙ্গায় পানি না থাকলে এ ব্যারাজ প্রকল্পটি তিস্তা ব্যারাজের মতোই অকার্যকর হবে। ভারত ইতিমধ্যেই এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্প্র্রতি ভারতের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। এসবের বাইরে সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য বৈষম্য প্রভৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে বিস্তৃত এজেন্ডা তৈরি করেছেন কর্মকর্তারা। তবে এজেন্ডাগুলো প্রধানমন্ত্রী নিজে চূড়ান্ত করবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

সর্বশেষ খবর