বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে শেখ হাসিনা

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক তহবিল গঠন করুন

নিজামুল হক বিপুল, মারাকাশ, মরক্কো থেকে

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক তহবিল গঠন করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ধাবমান হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবার সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। পানি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনেরও আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা ২২ মিনিটে মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলনের হাইলেভেল সেগমেন্টে ৪৯তম বক্তা হিসেবে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজকের এই দুর্লভ মুহূর্তে আসুন আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য একটি পৃথিবী গড়ে তুলি। সবাই সমান দায়িত্ব নিয়ে গড়ে তুলি আমাদের প্রতিশ্রুত এক সুন্দর পৃথিবী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হলে লাখ লাখ মানুষের জীবন এবং জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অভিবাসনের ইস্যু প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অভিবাসনের চ্যালেঞ্জটি সঠিকভাবে মোকাবিলা করা না হলে আমরা কখনই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে সামর্থ্য হব না। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের অবশ্যই নিরাপদ খাবার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আসুন আমরা পানি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠন করি। এই তহবিলের অর্থ পানি বিষয়ে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের কাজে ব্যবহার করা হবে। বিশ্বের পানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী পানি বিষয়ে জাতিসংঘের অ্যাকশন প্ল্যানের প্রতি তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।  শেখ  হাসিনা বলেন, এবারের সম্মেলন আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। আমরা এ বছর ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তির কার্যকর উদযাপন করছি। গত বছর আমরা প্যারিসে সফলভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় একটি অর্থবহ ভীত তৈরি করতে সমর্থ হয়েছি। এখন সময় আমাদের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া। বাংলাদেশ হচ্ছে প্যারিস চুক্তি অনুমোদনকারী প্রথম দেশগুলোর একটি। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষয়ক্ষতির তার সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমরাই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনে নিজস্ব অর্থে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। এ পর্যন্ত আমরা এই তহবিলের নিজস্ব সম্পদ থেকে ৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো উচ্চমাত্রার ঝুঁকি সত্ত্বেও আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অর্জন করেছি। এ সাফল্যের মধ্যে রয়েছে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং নদী শাসনের মতো কার্যক্রম গ্রহণ। যা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১টায় প্ল্যানারি অধিবেশনের উদ্বোধন করা হয়। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয় সম্মেলনের হাইলেভেল সেগমেন্ট। এই সেগমেন্টে একে একে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান ও মন্ত্রীরা বক্তব্য রাখেন। ভোর রাত পর্যন্ত চলে এই বক্তব্য। এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, সবুজ জলবায়ু তহবিলে (জিসিএফ) ২০২০ সাল থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি উন্নত বিশ্ব দিয়েছে, তাদের সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তহবিলে অর্থ দিতে হবে। কারণ উন্নত বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের কারণে জলবায়ু বিশ্বের দরিদ্র ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলো ঝুঁকির মুখে। এসব দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে দিতে জিসিএফ-এ প্রতিশ্রুত অর্থায়ন দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর