বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বখাটের উৎপাতই কেড়ে নিল দুই ছাত্রীর প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বখাটের উৎপাতই কেড়ে নিল দুই ছাত্রীর প্রাণ

দুই বান্ববী বর্ণা ও শম্পা

কিশোরী শম্পা ও বর্ণার ঘনিষ্ঠতা ছিল খুব বেশি। একই গ্রামে তাদের বাড়ি। একই স্কুলে পড়ত, একসঙ্গে স্কুলে যেত, বেঞ্চে পাশাপাশি বসত। এমনকি স্কুলে তাদের রোল নম্বরও পাশাপাশি। শম্পার ২৪ আর বর্ণার ২৫। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শম্পার ঘরে তারা দুজনই একসঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, উম্মে মারিয়া শম্পা (১৪) ও তামিমা খাতুন বর্ণা (১৩) স্থানীয় বখাটের উত্ত্যক্তে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তাই তারা দুজন ‘সুইসাইড নোট’ লিখে একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছে। দুই কিশোরীর বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ শাহাপুর এলাকায়। তারা পার্শ্ববর্তী বেলঘরিয়া আবদুস সাত্তার উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। শম্পার বাবার নাম মুক্তার আলী। আর বর্ণার বাবার নাম নাজমুল হক। বর্ণার বাড়ি থেকে ৮-১০টি বাড়ি পরই শম্পার বাড়ি। মঙ্গলবার রাতে ওই দুই কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পর থেকে গতকাল সারাদিন আশপাশের গ্রামের শোকাহত মানুষের ঢল নামে শাহাপুরে। বেলা ১২টার দিকে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তখনো ময়না তদন্ত শেষে দুই কিশোরীর লাশ গ্রামে ফেরেনি। পুরো এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অসংখ্য নারী-পুরুষ গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে বসে গুঞ্জন করছেন। আর দুই বাড়ি থেকে ভেসে আসছে কান্নার রোল। শম্পার মা শরিফা বেগম (৩৫) জানান, এক বছর আগে শাহাপুর পশ্চিমপাড়ার বিপ্লব হোসেন (২৩) নামে এক যুবক শম্পাকে উত্ত্যক্ত করত। তিনি ওইদিকে কান না দিয়ে মন দিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা করতে বলতেন। বর্ণার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা সাবিনা বেগমের (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, বেলঘরিয়া এলাকার মো. মুন্না (১৮) নামে এক বখাটে তার মেয়েকে বিরক্ত করত। রাস্তাঘাটে বন্ধুদের নিয়ে পথ আটকিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিত। কয়েকদিন আগে এলাকার এক ব্যক্তিকে নিয়ে মুন্না পরপর তিন দিন তাদের বাড়িতে যায়। তিন দিন তিন রকম অজুহাত নিয়ে সে বাড়িতে ঢোকে। কিন্তু বর্ণা তার সঙ্গে দেখাও করেনি, কথাও বলেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্নার বাবার নাম আবদুল কাদের। বর্ণার স্কুলেই পড়াশোনা করত। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করেছে। ওই স্কুলের সামনেই সে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিত। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বর্ণার পিছু নিত। এলাকার লোকজন তাকে নিষেধ করেছিল কয়েকবার। কিন্তু সে বর্ণাকে বিরক্ত করেই যেত। বর্ণা-শম্পার আত্মহত্যার পর এই মুন্না এখন পলাতক রয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, বর্ণা ও শম্পার লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ ঘর থেকে দুটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করেছে। শম্পার সুইসাইড নোটে বিপ্লবের নাম আছে, আর বর্ণারটিতে আছে মুন্নার নাম। রাসিকের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার সাদাত নান্নু ও ইউসুফপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন জানান, বিপ্লব ও মুন্না খুবই দুষ্টু প্রকৃতির বখাটে। তাদের নামে এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অনেক অভিযোগ আছে। দুই কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পর তারা গা-ঢাকা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর