বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিরোধীদলীয় নেতার বিদেশ সফর ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিরোধীদলীয় নেতার বিদেশ সফর ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় দলীয় সংসদ সদস্যসহ নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধীদলীয় নেতা কখনো স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে বিদেশ সফর করেননি। এটা নজিরবিহীন। বিরোধীদলীয় নেতার পদপর্যাদা ছায়া প্রধানমন্ত্রীর মতো। রওশন এরশাদ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে বিদেশে একাধিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে নিজের ও দলের অবস্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। যে কারণে জনগণ জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল মনে করে না। আর বিদেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সফরে এলে রওশন এরশাদ তাদের সাক্ষাৎ পান না। অথচ সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের প্রধানের সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করেন। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত বিব্রত হতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি জেনেভায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। এ সম্মেলনে অংশ নেন রওশন এরশাদ। গত বছর জাম্বিয়ায় আইপিইউর সম্মেলনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নেতৃতে যে প্রতিনিধিদল অংশ নেয়, তাতেও রওশন এরশাদ ছিলেন। সে সময় তাকে পাঁচ তারা হোটেল বরাদ্দ না দেওয়া নিয়ে চিঠি চালাচালি হয়। অবশ্য পরে তার জন্য উন্নত হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৪ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আইপিইউ সম্মেলনেও রওশন এরশাদ গিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ম্যাডামের বিদেশ সফরে আমরা বিব্রত। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতাকে ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে বিদেশ সফর করতে কখনো শুনেছেন? এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. নোমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নেত্রীই ভালো জানেন। ম্যাডাম একজন মেধা সম্পন্ন মহিলা। জাতীয় পার্টিতে অনেক যোগ্য সংসদ সদস্য রয়েছেন। আগামীতে আমাদের সবার জন্যই ভালো হয়, নিশ্চয়ই তিনি এমন সিদ্ধান্তই নেবেন। জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশে বিভিন্ন সম্মেলন বা সেমিনারে অংশ নেওয়ার জন্য স্পিকার বিরোধীদলীয় নেতার কাছে দুজনের তালিকা চাইলে তিনি সব সময় নিজের নাম দেন। তার সঙ্গে আরও তিনজনের নাম তিনি প্রস্তাব করেন। প্রতিবারই তিনি তালিকায় সেলিম উদ্দিন ও রওশন আরা মান্নানের নাম দেন। জাতীয় পার্টির ৩৬ জন সংসদ সদস্য থাকলেও রওশন এরশাদ বিদেশ সফরে বারবার নিয়ে যান দুজনকে। দলের মধ্যে এ পক্ষপাত নিয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও কেউ প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলতে চান না।

এ ব্যাপারে কথা বলে রওশন এরশাদের বিরাগভাজন হতে পারেন ভেবে তারা চুপ থাকেন। জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, বাজেটসহ জাতীয় কোনো বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করার জন্য রওশন এরশাদ সংসদের মিডিয়া সেন্টার ব্যবহার করেন। আগে কোনো বিরোধীদলীয় নেতা তা করেননি। বিরোধীদলীয়  নেতার কার্যালয় বাদ দিয়ে যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সংবাদ ব্রিফিং করে, তিনি সে স্থান ব্যবহার করেন। এ স্থানটি বিরোধীদলীয় নেতার ব্যবহারের জন্য মানানসই নয়। দলীয় নেতাদের কেউ কেউ বলেন, বর্তমান সরকারে জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী রয়েছেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন। এসব কারণে জাতীয় পার্টিকে কেউ বিরোধী দল মনে করে না। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশ সফরকালে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

সর্বশেষ খবর