শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

জন্মদিনের একাধিক তারিখ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছে আদালত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার দিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ভুয়া জন্মদিন পালন বন্ধের আর্জি জানিয়ে করা মামলায় আদালতের সমনে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ আদেশ দেওয়া হয়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক এক নেতার দায়ের করা মামলায় ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম গতকাল এ আদেশ দেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাত্ক্ষণিক এক বিবৃতিতে এ পরোয়ানা বাতিলের দাবি জানান। বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো কর্মসূচিও ঘোষণা করে।

এ প্রসঙ্গে আদালতের পেশকার মো. আতিকুর রহমান জানান, বিচারক স্বাক্ষর করার পরে খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা রাজধানীর গুলশান থানায় পাঠানো হয়। ওই ওয়ারেন্ট গুলশানের ২০ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা করেন। ওইদিনই আদালত মামলা আমলে নিয়ে খালেদা জিয়াকে ১৭ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া সেদিন আদালতে না যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারির আবেদন করেন বাদী। সেই আবেদনের শুনানি করেই বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছে বলে বাদীর আইনজীবী দুলাল মিত্র জানান। তিনি বলেন, আসামিকে গ্রেফতার করা গেল কি না তা প্রতিবেদন আকারে ২ মার্চ আদালতকে জানাতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বাদী পক্ষের আইনজীবী দুলাল মিত্র ও কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বাদীর অভিযোগ ৩০ আগস্ট আমলে নিয়ে খালেদা জিয়াকে ১৭ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়। পরে সমন ফেরত এসেছে। কিন্তু তিনি ১৭ অক্টোবর আদালতে হাজির হননি। এ কারণে ওই দিন বাদী পক্ষ থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়। এরপর ২ নভেম্বর ও ১৭ নভেম্বর ধার্য তারিখ পার হয়ে গেলেও তিনি আদালতে উপস্থিত হন নাই। ফলে খালেদা জিয়াকে হাজির করার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়া প্রথম এই দিনে জন্মদিন পালন করেন। এটি যে তার ভুয়া জন্মদিন, তা প্রমাণের জন্য চারটি নথি আদালতে দাখিল করা আছে। এই চারটি হলো খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের কপি, যেটাতে জন্ম তারিখ উল্লেখ রয়েছে ৫ আগস্ট। বিয়ের কাবিননামা, যাতে জন্ম তারিখ ১৯৪৪ সালের ৯ আগস্ট। মেট্রিক পরীক্ষার নম্বরপত্র, যেটাতে জন্ম তারিখ ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ১৯৯১ সালে প্রকাশিত তার জীবনীর কপি, যাতে উল্লেখ রয়েছে তার জন্ম তারিখ ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট। মামলায় আরও বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া জন্মদিনে উৎসব করেন খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতা-কর্মীরা। এদিকে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের নির্দেশেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ পরোয়ানা জারি শুধু হাস্যকরই নয়, সরকারের কূটকৌশলের অংশ। নাসিরনগরের ঘটনা থেকে দৃষ্টি ভিন্ন খাতে ফেরাতে এ পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

বিপন্নতাবোধ থেকেই পরোয়ানা : গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনরা নিজেদের বিপন্ন মনে করে বলেই বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করছে। রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এক ধরনের হীনতা, এক ধরনের প্রতিহিংসা, সেই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এ মামলা দেওয়া ও গ্রেফতারি পরোয়ানা। যিনি মামলা দিয়েছেন, উনি কিন্তু একজন ব্যক্তি নন বা আওয়ামী লীগের সমর্থক নন, তিনি রাষ্ট্রপর্যায়ের সর্বোচ্চ জায়গায় যিনি আছেন, তার নির্দেশেই এ মামলা করেছেন। নইলে এ মামলা করার কথা নয়।’

বিক্ষোভ কর্মসূচি : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। গতকাল তারা পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। যুবদল জানিয়েছে, আজ শুক্রবার সারা দেশে মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে যুবদল। একইদিনে সারা দেশের জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে স্বেচ্ছাবেক দল। ছাত্রদল জানায়, আগামী শনিবার ছাত্রদল দেশের সব জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে।

সর্বশেষ খবর