শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

থানায় হামলার পরিকল্পনা জঙ্গিদের

এজেন্টসহ তামিমের পাঁচ সহযোগী র‌্যাবের হাতে আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

থানায় হামলার পরিকল্পনা জঙ্গিদের

র‌্যাবের হাতে আটক পাঁচ জঙ্গি। ইনসেটে উদ্ধারকৃত অস্ত্র —বাংলাদেশ প্রতিদিন

অস্ত্র লুটের জন্য থানায় হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। এজন্য ঝিনাইদহ সদর থানাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। থানা এলাকায় তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয় জঙ্গি সোহেল রানা ওরফে খাদেম ওরফে মুয়াজ্জিন ওরফে সোহেল ওরফে শহীদুল্লাহকে। তিনি এজেন্ট নিয়োগ করে গোপন খবর নেন থানায় কজন থাকে, কখন ডিউটি পরিবর্তন হয় এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ কেমন ইত্যাদি। কিন্তু থানায় হামলার আগেই র‌্যাবের জালে আটকা পড়েন শহীদুল্লাহ।

রাজধানীর   কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের মৃত আমির সারোয়ারের বিশ্বাসী গুপ্তচর ছিলেন শহীদুল্লাহ। তিনি ২০১৩ সালে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০১৫ সালে সারোয়ার-তামিম গ্রুপে যোগ দেন। শহীদুল্লাহ ঝিনাইদহ শহরের একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তার বাসস্থান ও কর্মস্থল ছিল ধর্মীয় উগ্রবাদপন্থিদের ‘সেফহাউস’। তার ব্যবস্থাপনায়ও বিভিন্ন মিটিং হতো। একদিন তার ঘরেই একটি গোপন বৈঠকে আলোচনায় কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকজন ছাত্র ছাড়াও জঙ্গি রাজীব উপস্থিত ছিলেন। যেখানে মৃত সারোয়ার তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। সেই আলোচনায় মূলত থানায় হামলার ছক তৈরি করা হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, শহীদুল্লাহ ছাড়াও জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন মাওলানা আবদুল হাকিম ফরিদী ওরফে সুফিয়ান, রাজীবুল ইসলাম ওরফে রাজীব ওরফে আহমেদ, গাজী কামরুস সালাম সোহান ওরফে আবু আবদুল্লাহ ও শেখ মো. আবু সালেহ ওরফে লিটন ওরফে হুরাইরা। বুধবার রাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে সুফিয়ান ও রাজীবকে এবং আদাবর থেকে সোহান, শহীদুল্লাহ ও হুরাইরাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১টি নাইন এমএম পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ১০টি ককটেল, ৫টি ডেটোনেটর, ১ কয়েল তার, ১ কেজি সাদা পাউডার, ২০০ গ্রাম বারুদ, দেড় কেজি তারকাঁটা ও বল, ২টি সার্কিট বোর্ড ও ১৫টি ক্লিপ টাইপ সার্কিট উদ্ধার করা হয়।

সোহান : সম্প্রতি সারোয়ার জাহান, তামিম চৌধুরীসহ শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু ও অনেকে আত্মগোপন করায় জেএমবিকে আবার সংঘবদ্ধ করার কাজ করছিলেন সোহান। তিনি গাজীপুরের ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে বিএসসি পাস। ২৭ বছর বয়সী এ যুবক প্রকৌশলী হিসেবে পেশাগত কাজে না গিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য হিসেবে বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ, নাশকতার কাজে ব্যবহারের জন্য বিস্ফোরকদ্রব্য তৈরি ও হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দিতেন সোহান। সোহানের জন্ম যশোরে। ২০০৭ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে আইইউটিতে ভর্তি হন। সেখানে পড়ার সময় কলেজবন্ধু সিফাতের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ সিফাতই আত-তামকিন জঙ্গি সাইটের অ্যাডমিন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি ৯ আগস্ট র‌্যাব-৪-এর একটি অভিযানে গ্রেফতার হন। সোহান আইইউটিতে পড়ার সময় হাতেমবাগে জসীমউদ্দীন রাহমানীর মসজিদে যাতায়াত করতেন। সেখানে একই মতাদর্শের কয়েকজনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়।

সিফাত তাকে জঙ্গিবাদ মদদপুষ্ট একটি সাইটে অন্তর্ভুক্ত এবং জেএমবির সারোয়ার জাহান ওরফে শাইখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে সোহান চট্টগ্রামে ছোটখাটো অস্ত্র ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এভাবে সোহান বিভিন্ন হামলা ও নাশকতার জন্য বিস্ফোরক তৈরি ও প্রশিক্ষণ দিতেন। এ ছাড়া তিনি জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ জোগাড় করতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ২৮ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন সোহান।

সুফিয়ান : সুফিয়ানের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি ১৯৯৭ সালে খিলগাঁওয়ের মাখাবাপুর উলুম মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সম্মান) সম্পন্ন করেন। ভালো বক্তা ও প্রশিক্ষক ছিলেন সুফিয়ান। আবদুল হাকিম, জসীমউদ্দীন রাহমানীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হন। তিনি সারোয়ার-তামিম গ্রুপের একজন আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষক হিসেবে জঙ্গিবাদ প্রচার ও প্রসারে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সুফিয়ান কর্মীদের জিহাদের জন্য আত্মদানে প্রস্তুত হতে দীক্ষা দিতেন। হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে তৌহিদ নামে একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার কাজে ব্যবহূত অস্ত্র ও গুলি জোগানোর ব্যবস্থা করতেন সুফিয়ান।

হুরাইরা : হুরাইরা কারাতের একজন প্রশিক্ষক। তিনি কর্মীদের শারীরিক প্রশিক্ষণ দিতেন। হুরাইরা ২০০২ সালে মামুনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৬ সালে একটি সভায় মাওলানা হাকিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মাওলানা হাকিম সারোয়ার-তামিম গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হন। রাজীব : রাজীব আধাস্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চালনার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি কর্মীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জসীমউদ্দীন রাহমানীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি মাওলানা হাকিমের মাধ্যমে সারোয়ার-তামিম গ্রুপে যোগ দেন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন।

সর্বশেষ খবর