শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ওখানে বর্ধিত সভা কীভাবে করে!

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনারের ধমক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওখানে বর্ধিত সভা কীভাবে করে!

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের বদলে সার্কিট হাউসে বর্ধিত সভা ডেকে প্রার্থী ঘোষণা করায় স্থানীয় এমপিকে সতর্ক করে চিঠি দিতে বলেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। গতকাল তিনি টেলিফোনে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসারকে এ নির্দেশনা দেন। এমনকি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ধমকও দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া পক্ষপাত (খাতির) না করে শক্তভাবে সব কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন শাহনেওয়াজ। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, টেলিফোনে প্রথমে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেন— আপনি কই আছেন? টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জে। তখন এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা তফসিল ঘোষণা করলাম ১৪ নভেম্বর। সেক্ষেত্রে ১৫ তারিখে সার্কিট হাউসে বর্ধিত সভা কীভাবে করে? আপনারা কিছু করলেন না কেন? আপনি দেখেন সার্কিট হাউস সিটির মধ্যে কি না? এ সময় তিনি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্থানীয় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বিশ্বাস না করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, জেলা নির্বাচন অফিসার হচ্ছে দুষ্ট লোক। ওই কর্মকর্তা সেই ব্যক্তির (স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি) পোষা। ওই কর্মকর্তা ভালো মানুষ নয়। আমি খেয়াল করিনি যে তার নামও আছে। এই নির্বাচন কমিশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাকে অনেক বিশ্বাস করি। আপনি জেলা অফিসারকে বিশ্বাস করবেন না। ওই কর্মকর্তা হচ্ছে বাজে লোক। সে ওই লোকের পেট্। আগে জানলে তার নাম বাদ দিয়ে দিতাম। আপনি যদি দেখেন যে সিটি করপোরেশন এলাকার তবে নোটিস দিয়ে দেবেন। আমার তো মনে হয় ওই এলাকা সিটি করপোরেশনের মধ্যে। ডিসি অফিস আর সার্কিট হাউস কাছাকাছি। আমি অনেকটাই শিউর যে ওটা সিটি এলাকার মধ্যে। যা করার প্রথমেই করতে হবে। না হলে সামলাতে পারবেন না। এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসারের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, তোমার জেলা তো নারায়ণগঞ্জ? নির্বাচন অফিসার তো? তুমি তো জান সার্কিট হাউসটা সিটির বাইরে না ভিতরে? এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘যদি সিটি নির্বাচনের কোনো প্রচারণা হয়, যদি নজরে আসে যে কোনো এমপি সাহেব লড়ছে, তবে সেগুলো বাধা দিবা। তোমার যত খাতিরের  হোক, তুমি বাধা দিবা। আচরণবিধি যেন কোনোভাবেই লঙ্ঘন না হয়। এটা খেয়াল রাখবা। কাজ না করলে কোনো আশীর্বাদে কাজ হবে না। আমরা কিন্তু সিরিয়াস এ ব্যাপারে। শক্তভাবে যেন হয় সব। ডিসি সাহেব কে বলবা আমার কথা, পরে আমি ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলব। যেন কোনো খাতির না করেন।’

প্রথম দিনে ১১৩ জনের মনোনয়নত্র সংগ্রহ : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণের প্রথম দিনে গতকাল ১১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা বেলাল হোসেন জানান, মেয়র পদে একমাত্র মনোনয়নপত্রটি সংগ্রহ করেছেন কল্যাণ পার্টির প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। এবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়ই জামানতের টাকা ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে অগ্রীম দিতে হচ্ছে। আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জামানতের টাকা ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে দিতে হতো। তা ছাড়া ভোটার তালিকার সিডির জন্য মেয়র প্রার্থীকে সাড়ে ১৩ হাজার, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দেড় হাজার এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীতে ৫০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট জমা দিতে হয়েছে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়।

বিএনপি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি : নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী আনোয়ার হোসেন গতকাল গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখনো অপেক্ষা করছেন সবুজ সংকেতের। নির্বাচনে যাবে কী যাবে না বিএনপি সেই সিদ্ধান্ত আজ ঘোষণা করার সম্ভাবনা। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত না এলেও থেমে নেই বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। গতকাল বেলা ১টা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে বিএনপির বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী।

জানা গেছে, গত কোরবানির ঈদের পর থেকেই নাসিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগ। দফায় দাফায় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলে ডজনখানেক সভা-সমাবেশ হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর প্রস্তাবিত এ কে এম সামসুজ্জোহা স্টেডিয়াম মাঠে বিশাল জনসভায় লাখো তৃণমূল আল্লাহকে সাক্ষী রেখে নৌকার প্রার্থী হিসেবে আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দেয়। এরপর গত মঙ্গলবার বিকালে জেলা সার্কিট হাউসে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৫০ জন সদস্য আনোয়ার হোসেনসহ তিনজনের নাম প্রার্থী কেন্দ্রে পাঠায়।

মেয়র পদে বিএনপির সম্ভাব্য তিনজন প্রার্থী হলেন তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল। এদের মধ্যে তৈমূর আলম খন্দকার রয়েছেন এগিয়ে। কিন্তু গত কোরবানির ঈদের পরে তিনি মেয়র প্রার্থী হবেন বলে এক শর্তে দিয়ে বলেছিলেন, গতবারের নাসিক নির্বাচনের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে তাকে বসিয়ে দেয় বিএনপি। কেন তাকে বসিয়ে দেওয়া হলো এর সন্তোষজনক জবাব পাওয়ার পরই তিনি নির্বাচনে যাবেন।

সর্বশেষ খবর