শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরোতে হবে

মাহমুদ আজহার

প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরোতে হবে

ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া

বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমেই সংঘাতের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, ‘দেশ যে সংঘাত পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, তা কারও কাম্য নয়। রাজনীতিতে সহনশীলতা নেই। সংলাপ-সমঝোতা নেই। চলছে শুধু প্রতিহিংসার রাজনীতি। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। সরকারকে উদার মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে। তাহলেই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এত কিছুর পরও পরিবর্তন হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা জনগণের ওপর নির্ভর করবে। বাংলাদেশেও জনগণকে সঠিকভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা দিলে বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন হবেই ইনশাল্লাহ।’ গতকাল সকালে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া রাজধানীতে তার নিউ ইস্কাটনের নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন। ৭৫ বছর বয়সী বিএনপির এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে ৭৫টি রাজনৈতিক মামলার খড়গ ঝুলছে। প্রবীণ এই আইনজীবী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুবার জেল খাটেন। সর্বশেষ রাজনৈতিক এক মামলায় প্রায় তিন মাস জেল খেটে গত ১৮ জুন মুক্তি লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি অনেকটাই নীরব রয়েছেন। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাহ্যিকভাবে উন্নয়ন দেখা গেলেও তা টেকশই হয় না। অতীত ইতিহাস তাই বলে। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে কখনোই সত্যিকারে গণতন্ত্রের উন্নয়ন হয় না। দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমাদের চেয়ারপারসন যে ডাক দেবেন, তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো পাশাপাশি সুধী সমাজের সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সার্চ কমিটি গঠন করা উচিত। সরকার সবার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইতিপূর্বে কী ধরনের নির্বাচন হয়েছে, সেটা শুধু দেশবাসী নয়, বহির্বিশ্বও দেখেছে। তাই এমন ইসি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় ছিল। সেই দলের একটি সভা পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। বিরোধী দল-মতের নেতা-কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে শুধু রাজনৈতিক কারণেই একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও নিত্যনতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে। তারেক রহমানকে এক মামলায় সাজাও দেওয়া হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। রাজনীতিতে এই অপসংস্কৃতি কাম্য নয়। তাকে দুই দিন পরপরই আদালতে দৌড়াতে হচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশে এটা কাম্য হতে পারে না। আমিও আজ ৭৫ বছর বয়সী। এই সময়েও আমার বিরুদ্ধে ৪৭টি মামলার খগড় ঝুলছে। শুধু আমিই নই, সিনিয়র-জুনিয়র নেতা ছাড়াও মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়। এই বাংলাদেশের জন্য তো আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করিনি।’ তিনি বলেন, ‘আজ ক্ষমতাসীনরা যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে বাদ দিয়েছে, তার দাবিও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছিল। এ নিয়ে ৫ম পার্লামেন্টে কী ধরনের হৈচৈ হয়েছিল, সবাই জানে। সবার কথা শুনেই তখন বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল। আমরা মনে করি, এখনো সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা বিবেচনায় নেবেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নির্বাচন পদ্ধতি বের করা হবে। সরকার দাবি না মানলে তা মেনে নেওয়ার জন্য জনগণের সহায়তায় বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে। এ দাবির প্রতি জনগণের সর্বাত্মক সমর্থন রয়েছে।’ রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘একজন আইনজীবী হয়ে আজ আমাকেও আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। আমার প্রতি চরম অন্যায় করছে সরকার। আমিও এক সময় ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। কিন্তু যে পথে আওয়ামী লীগ এখন, এটা আজ আমরা ভাবতেও পারি না। ক্ষমতাসীনদের এই পথ পরিহার করা উচিত।’

সর্বশেষ খবর